বাড়তি ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফেরা

মানুষের চাপে ফেরিতে গাড়ি উঠতে পারেনি। শনিবার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে।
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় বাড়ি নাহিদুল হকের (৩০)। গাজীপুরের টঙ্গীর এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রোববার থেকে কারখানা খোলার কথা জানতে পারেন শুক্রবার রাতে। দেরি না করে শনিবার সাতসকালে ছুটেছেন টঙ্গীর উদ্দেশে।

স্ত্রী ওই দুই সন্তান ও হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছান নাহিদুল। ক্ষোভের সুরে বলছিলেন, ‘ভাই, আমি সাধারণ শ্রমিক। বেতন পাই মাত্র ১১ হাজার টাকা। ঈদের সময়ে বাড়ি যেতে খরচ হয়েছিল প্রায় দুই হাজার টাকা। আজ কয়েক দফায় মাহেন্দ্র ও অটোরিকশা বদলে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। এতে খরচ হয়ে গেছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। হাতে আর আছে ৩ হাজার টাকার মতো। টঙ্গী পর্যন্ত কীভাবে পৌঁছাব, কত টাকা খরচ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আবার কাজ শুরু করলে কারখানা থেকে বেতন পাব এক সপ্তাহ পর। এই এক সপ্তাহ কীভাবে সংসার খরচ চালাব, তা ভেবে পাচ্ছি না।’

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই কারখানা খুলে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নাহিদুলের মতো অনেকেই। গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তি তো আছেই। সঙ্গে ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোর।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘাটে আসেন আলামিন মোল্লাসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্য। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর এই পরিবারের কয়েকজন সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে মোটরসাইকেল ভাড়ায় নেন। ঘাট পর্যন্ত আসতে গুনতে হয়েছে জনপ্রতি ৬০০ টাকা। হাজারো মানুষের ভিড়ে ফেরিঘাটের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গাও পাচ্ছিলেন না। করোনাকালে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি তো ছিলই। ওদিকে প্রখর রোদ-গরমে নাভিশ্বাস উঠছিল।

কঠোর বিধিনিষেধে বাস বন্ধ। ছোট ছোট গাড়িতে যে যেভাবে পেরেছেন, ঘাটে এসেছেন। শনিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকার পদ্মারমোড় সেতুর কাছে।
ছবি: প্রথম আলো

দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে হাতে গোনা কয়েকটি যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে আসে রো রো ফেরি ভাষাশহীদ বরকত। ফেরি আসতে দেখেই ঘাটের পন্টুন থেকে শুরু করে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত জনস্রোত শুরু হয়ে যায়। মানুষের ভিড়ে যানবাহন নামানোর জায়গা না থাকায় ঘাটে ভিড়তেই পারেনি ফেরিটি। বাধ্য হয়ে ফেরিটি প্রায় ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত ৭ নম্বর ফেরিঘাটে চলে যায়। তখন ওই জনস্রোত ধাবিত হতে থাকে ৭ নম্বর ঘাটের দিকে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার ভোর থেকেই ঘাটে মানুষের চাপ। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় তাঁরা গাড়ি পারাপার করেছেন ৩০০টির মতো। অথচ যাত্রী পারাপার হয়েছে দুই লাখের মতো।