বিএনপিই ফখরুলের গাড়িতে হামলা করেছে: এইচ টি ইমাম

এইচ টি ইমাম
এইচ টি ইমাম

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, বিএনপির গুলশান অফিসে মনোনয়ন–বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের ওখানেও। ওখানে তাঁদের দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না।

আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম।

গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট এলাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীরা বহরের সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করে বলে জানায় বিএনপি। বেলা ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজন নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে এ হামলা হয়।

ফখরুলের গাড়িবহরে ওই হামলা নিয়ে আজ এইচ টি ইমাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার যে ঘটনা ঘটছে, সেগুলো আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে ইতিমধ্যে আমাদের দুজন সদস্য নিহত হয়েছেন। এঁরা নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে তৃণমূলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কাজেই বেছে বেছে তাঁদের ওপরই এই আক্রমণ করা হচ্ছে, এটা আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি।’

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘তাদের (ইসি) কাছে তো অন্যরা অন্যভাবে বিষয়গুলো বলেছেন। যেমন-বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তারা তো পুলিশকে খবর দিয়ে সেখানে যায়নি। পুলিশেরও জানা ছিল না। স্থানীয়ভাবে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশান অফিসে মনোনয়ন–বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। তারই বহিঃ প্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের ওখানেও। ওখানে তাদের দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না।’

বিশেষ একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে মন্তব্য করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আমি ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। এ রকম ভুল হওয়া উচিত না। এ রকম খবর যাচাই-বাছাই করে নিলেই হয়। এখন তো খোঁজখবর নেওয়া সহজ। কোনো একটিতে এ রকম ঘটলে অন্যরা প্ররোচিত হন, উৎসাহী হন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই সময়ে নানা রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য মিডিয়ার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এ ধরনের বিষয় যাতে যাচাই–বাছাই করে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়।’ এমনভাবে পরিবেশন করে, যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। যোগ করেন তিনি।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে হত্যার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের সাধারণ সম্পাদক যে বর্ণনা করলেন, তাতে যুবলীগ নেতা, যাকে হত্যা করা হয়েছে, প্রথমে তাঁর চোখে মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁর মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে মারা হয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে পরিশেষে তাঁকে গুলিও করা হয়েছে। এগুলো কোন ধরনের কাজ! এগুলোতে আমরা ২০১৩-১৪ তে যে রকম দেখেছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর লোকেদের দেখেছিলাম। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে এ রকম আমরা বরদাশত করতে পারি না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যত সহিংসতা হচ্ছে সেগুলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বেশি হচ্ছে। নোয়াখালী ও ফরিদপুরে আমাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছে। মাহী বি. চৌধুরীর গাড়িবহরের ওপর গাড়ি হামলা, তার প্রমাণ। মহাজোটের অন্যান্য সহযোগীদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে।

এইচ টি ইমমা বলেন, ‘আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, মিথ্যা ও গুজব তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করেন। এ ছাড়া পটুয়াখালী, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরের গাংনী ও নরসিংদী জেলায় আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। এগুলো নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁদের আমরা অনুরোধ করেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ইসির কর্তৃত্বাধীন। আপনারা তাদের ব্যবহার করুন, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’ এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব বা ব্যর্থতা দেখছেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ব্যর্থতা বলব না। তাদেরই আমরা সতর্ক করলাম। তাঁদের আমরা বলেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এখন তো চিহ্নিত করা সহজ। এখন তো এসব ঘটনার ছবি পাওয়া যায়। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।’

নির্বাচন কমিশন থেকে আপনাদের কী ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে তাদের আমরা জানালাম। এসব ঘটনা তারা জানতও না। আমরা জানানোর পর তারা (ইসি) বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন। এখন আমরা দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেয়।’

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে? এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমি বলব নির্বাচন কমিশন এখনো যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ এবং তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তাঁরা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, আমরা বৃহত্তর দল যাতে তাঁদের সহযোগিতা করি। আমরা বলেছি আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করছি। কিন্তু আমরাই যদি আক্রান্ত হই, তাহলে আমাদের রক্ষা আপনারাই (ইসি) করবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব আপনারা পালন করুন। কমিশন বলেছে, এ বিষয়গুলো তাঁরা দেখছেন। এখন থেকে সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন।’