বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তালা, কার্যক্রমও স্থবির

চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে এই স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে দেড় মাস ধরে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে দলটির কোনো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। কার্যালয়টিতে এখন ঝুলছে তালা।

দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি নগর কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন গত ৭ নভেম্বর রাজধানী ঢাকা থেকে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম গত ২২ অক্টোবর নগরের জিইসি মোড় থেকে গ্রেপ্তার হন। আবুল হাশেমের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তাঁরা সবাই এখন কারাগারে।

দলীয় নেতারা আরও জানান, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সম্পাদকীয় পদের আরও ১৬ নেতা কারাগারে আছেন। ফলে নগর বিএনপির কার্যক্রম দেড় মাস ধরে স্থবির রয়েছে। সংগঠনটির দ্রুত মাঠে নামারও কোনো প্রস্তুতি নেই বলে দলীয় নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন। কারণ, বিভিন্ন মামলায় পুলিশ এখনো ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে। ফলে কেউ রাজনীতির মাঠে আসতে সাহস পাচ্ছে না।

কারারুদ্ধ নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালি–বাকলিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তফসিল ঘোষণার আগে তিনি গ্রেপ্তার হন। ফলে তাঁর জন্য দলীয় কিছু নেতা–কর্মী কাজ করেছিলেন। মামলা–মোকদ্দমার কারণে পুরো শক্তি নিয়ে শাহাদাতের পক্ষে নেতা–কর্মীরা কাজ করতে পারেনি বলে দলীয় সূত্র জানায়।

নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পর পুলিশ ধরপাকড় বন্ধ করবে বলে নেতা–কর্মীরা মনে করেছিল। কিন্তু মামলা–হামলা বন্ধ হয়নি। বরং নতুন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাঁরা কারাগারে আছেন তাঁদেরও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির করণীয় কী জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সতর্কতার সঙ্গে আমাদের এগোতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবেগের বশবর্তী হয়ে কিছু করা যাবে না। তা ছাড়া তাড়াহুড়ো করে আন্দোলনে যাওয়া যাবে না। তবে নির্বাচনে মানুষ বিএনপির পক্ষে ছিল। অনেকে ভোট দিতে পারেনি বলেন সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বিএনপির পক্ষে। তাই মানুষের সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে ধীরগতিতে এগোতে হবে আমাদের।’

গত বুধবার বিকেলে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে দলীয় নেতা–কর্মীদের আনাগোনা নেই। মূল ফটকে বসে অলস সময় কাটছে একদল পুলিশের। কার্যালয়ের মাঠে ক্রিকেট খেলছে কিছু শিশু–কিশোর। আর কার্যালয়ে ঝুলছে তালা।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, কার্যালয়ে নেতা–কর্মীরা এখন আর আসেন না। মাঠে প্রতিদিন বিকেলে ক্রিকেট খেলে আশপাশের শিশু–কিশোরেরা।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। পুলিশ কাউকে মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। এমনকি নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন ৪২ মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। নির্বাচনের দুদিন আগে তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। আরেকটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফলে তাঁর মুক্তি আটকে যায়। একইভাবে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা আছে। তাঁকেও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

নগর বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘নগরে ৬টি থানা এবং ১৫টি ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সম্পাদক কারাগারে। এ ছাড়া নগর কমিটির প্রায় প্রতিটি নেতা মামলার আসামি। মুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ কার্যত বন্ধ। আসলে একটি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। এ রকম পরিস্থিতি আর কখনো বিএনপিকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই।’