বিএফআইইউ ও সিআইডির পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট

পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ ও সিআইডি কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে হলফনামা আকারে আদালতকে আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই বিষয়ে চাহিদাপত্র অনুসারে দুদককে কেন তথ্য দেওয়া হয়নি, সে বিষয়েও হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে।

এর আগে রোববার পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, বাংলাদেশের এমন ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) ওয়েবসাইটে দেশভিত্তিক তালিকা পর্যালোচনা করে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার কথা জানায় দুদক।

প্রতিবেদনে দুদক উল্লেখ করে, মানি লন্ডারিং আইনের ২৮টি ‘প্রেডিকেট’ অপরাধের মধ্যে শুধু ঘুষ ও দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করে। ওই অভিযোগ দুদকের তফসিলবহির্ভূত বলে অনুসন্ধানকাজে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের বিভিন্ন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান পাচারের মাধ্যমে বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে, বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস একটি রিট আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। সুইস ব্যাংকসহ দেশের বাইরে বিদেশি ব্যাংকে গোপনে পাচার করে অর্থ রাখা ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা, অর্থের পরিমাণ এবং ওই অর্থ উদ্ধারে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়। এর আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িত দুর্বৃত্তদের নাম, ঠিকানা ও পাচার করা অর্থে তাঁদের বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে নির্দেশ দেন। দুটি বিষয় গতকাল একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে। আর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ওই প্রতিবেদন দাখিল করে।

আজ আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান, দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।

শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অফশোরসহ অন্যান্য কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সম্পত্তি অর্জনসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মূলত বিএফআইইউ সর্বাধিক উপযুক্ত মাধ্যম। অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে, অর্থাৎ মূল অনুসন্ধানাধীন বিষয় তথা ওই ব্যক্তি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট দেশে অফশোর কোম্পানি খোলা এবং তাতে বিনিয়োগ ও লেনদেনসংক্রান্ত তথ্যাদি বিএফআইইউ থেকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রিট আবেদনকারী আবদুল কাইয়ুম খান শুনানিতে বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারসহ মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানিয়ে বিবাদীদের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। এ বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।