বিক্ষোভকারীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা

সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের সঠিক তালিকা প্রকাশসহ সব শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে গতকাল বুধবার বিক্ষোভকালে শ্রমিকদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাভার মডেল থানার পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও রানা প্লাজা গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গতকাল পৌনে ১০টার দিকে কয়েক শ শ্রমিক ও নিখোঁজদের স্বজনেরা ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি থানা বাসস্ট্যান্ড ও সিটি সেন্টার হয়ে আগের রানা প্লাজার স্থানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে মহাসড়কের একাংশে সমাবেশ হয়। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশসহ সব শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২৪ জুনের মধ্যে দাবি পূরণ করা না হলে সাভারের সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শ্রমিক শেফালী আক্তার বলেন, রেজিয়া, লিপি, জিয়াসমিনসহ তাঁরা চার বোন ধসে পড়া রানা প্লাজার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ঘটনার পর তিনি ও জিয়াসমিন জীবিত উদ্ধার হলেও অন্য দুই বোন মারা যান। তাঁদের মৃতদেহের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের জীবিত দুই বোনকে পারিশ্রমিক বাবদ ১৫ হাজার টাকা আর পাঁচ হাজার টাকার সহায়তা ছাড়া আর কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।

ধসে পড়া রানা প্লাজার তৃতীয় তলার শ্রমিক আঁখি আক্তার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘গার্মেন্টস মালিকেরা বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে কারখানা করেন। সরকার তহন খবর রাখে না। ভাইঙ্গা পড়ার পর হুঁশ অইলেও আহত ও নিহত শ্রমিকগো ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয় না।’

শ্রমিক এমদাদুল হক বলেন, ‘ভাড়ার জন্য বাসার মালিকরা ঘর ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এখন অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে শুধু আশ্বাসের বাণী শুনিয়েই আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য সরকার অনেক টাকা পেয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শ্রমিকই কোনো সহায়তা পাননি। তিনি ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া অর্থ ও তা বিতরণের হিসাব প্রকাশের দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে কয়েক শ শ্রমিক মহাসড়কের এক পাশে বসে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণসহ নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বহিরাগত লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান। এ সময় শ্রমিকেরা পাল্টা হামলা চালালে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। শ্রমিকেরা যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বহিরাগতদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশ এসে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নিখোঁজ শ্রমিক এরিনার স্বামী মাজেদ মোল্লা বলেন, ‘সরকার আমাগো দাবি পূরণের উদ্যোগ না নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীসহ সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালাইছে। তাগো পুলিশও আমাগো মারপিট করে, গুলি চালায়।’

পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ ফরিদ উদ্দিন প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা উল্টো আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিই।’