বিচ্ছিন্ন জনপদ শাহপরীর দ্বীপ

বিধ্বস্ত শাহপরীর দ্বীপ সড়কে কাদা মাড়িয়ে চলাচল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা l প্রথম আলো
বিধ্বস্ত শাহপরীর দ্বীপ সড়কে কাদা মাড়িয়ে চলাচল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা l প্রথম আলো

টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশ সাগরের জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ২০১২ সালের জুন মাসে। এর পর থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ। তিন বছরেও সড়কটি পুনর্নির্মাণ হয়িন। ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কার্যত বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয়েছে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ। এদিকে ভাঙা তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধও মেরামত হয়নি। সামনের বর্ষা নিয়ে আতঙ্কে আছে এখানকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটারের সড়কটির শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়া থেকে খাদিয়াখীল পর্যন্ত অংশ বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের ওই অংশ পার হতে হচ্ছে নৌকায় করে। অবশ্য ভাটার সময় পানি কম থাকলে কাদা মাড়িয়ে অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন ওই অংশ। এ নিয়ে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ এখন বিচ্ছিন্ন জনপদ। শুষ্ক মৌসুমে তো কোনোরকমে চলাফেরা করা যাচ্ছে কিন্তু বর্ষায় কী করব, সেই চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ সদরে যে নিয়ে যাবে ওই অবস্থা নেই। নেওয়ার পথেই মারা যাবে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ হলে লোকজন আশ্র নেওয়ার জন্য সাইক্লোন শেল্টারও নেই। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী পলাশ বড়ুয়া বলেন, আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এরপর সড়ক নির্মাণ করা হবে। বাঁধের আগে সড়ক নির্মাণ করা হলে তা টিকবে না।
স্থানীয় লোকজন জানায়, স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙা অংশের আধা কিলোমিটারে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধে প্রতিনিয়ত মাটি, বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভাঙা অন্য অংশ দিয়ে এখন জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীর দ্বীপ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেঙে যায়। এরপর ২০০১ সালে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে আবার বাঁধ ভেঙে শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সাগরে তলিয়ে যায়। এবার আবার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের ২২ জুনে সেই বাঁধ ভেঙে বসতবাড়ি, মৎস্য আড়ত ও দুটি মসজিদ বিলীন হয়ে যায়। ভেঙে যায় একমাত্র সড়কটি।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধটি জোয়ারে আঘাতে বিলীন হয়। এরপর ওই ভাঙা বাঁধটি নির্মাণের জন্য সাড়ে ৯৭ কোটি টাকা খরচ করা হলেও পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধটি স্থায়ী হচ্ছে না। অমাবস্যার ও পূর্ণিমার জোয়ারের রিং বাঁধটি ধসে পড়ছে। ফলে আতঙ্কে আছে দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ।
পাউবোর টেকনাফে দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় টেকসই বাঁধের জন্য অনেক আগে ১০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ প্রকল্পটি অনুমোদন হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তার পরও বর্ষার আগে ওই স্থানে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।