বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম আর নেই

বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম
বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম

সোনালি আঁশের সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন দেখানো বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম আর নেই। পাটের দুটি জাত ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী এই বিজ্ঞানী গত শনিবার দিবাগত রাত দুইটায় যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
মাকসুদুল আলম কয়েক বছর ধরে কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন। ২ ডিসেম্বর তাঁকে কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে কয়েকবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ভাই মেজর জেনারেল (অব.) মঞ্জুরুল আলম তাঁর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।
পাট ও ছত্রাকের মেধাস্বত্ব অর্জনের পথে বাংলাদেশ
মঞ্জুরুল আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মাকসুদুল। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একই সঙ্গে তাঁর লিভার, কিডনি ও ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে। তাঁর ছোট ভাই মাহবুবুল আলম জানান, ২৪ ডিসেম্বর লালমাটিয়ায় ছোট বোনের বাসায় তাঁর কুলখানি হবে।
মৃত্যুকালে স্ত্রী রাফিয়া হাসিনা, ১৬ বছর বয়সী মেয়ে জিসানসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার বেলা তিনটায় হাওয়াইয়ান জেনারেল পার্কের কবরস্থানে মাকসুদুল আলমের দাফন হবে বলে জানান মঞ্জুরুল আলম।
মাকসুদুল আলম ছিলেন জিনতত্ত্ববিদ। তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিনোম সিকোয়েন্স বা পাটের জীবনরহস্য। ২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারের ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এই বিজ্ঞানী। ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে বসবাস করছিলেন মাকসুদুল। পাট ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে পেঁপে, মালয়েশিয়ার হয়ে রাবারসহ মোট আটটি উদ্ভিদের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন।
১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন মাকসুদুল আলম। তাঁর বাবা দলিলউদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি শহীদ হন। মা লিরিয়ান আহমেদ ছিলেন সমাজকর্মী ও শিক্ষিকা।

স্বাধীনতার পর মাকসুদুল আলম রাশিয়ায় চলে যান এবং সেখানে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাণরসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
মাকসুদুল আলমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও শোক জানিয়েছেন।