বিদেশ থেকে ফিরেই বউকে নির্যাতন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রবাসফেরত স্বামীর নির্যাতনে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ শাহনাজ বেগম (২৪)। এ ঘটনায় মামলা হলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত পুলিশ গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, প্রেমের সম্পর্কের পর ২০০৭ সালের শেষ দিকে গোয়ালন্দ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কদম আলী খাঁর ছেলে নজির খাঁর সঙ্গে পূর্ব উজানচর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নুরু ব্যাপারীর মেয়ে শাহনাজ বেগমের বিয়ে হয়। কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করায় শুরু থেকেই বিষয়টি মানতে পারেনি নজিরের পরিবার। বিয়ের কিছুদিন পর নজির বাহরাইনে চলে যান। দুই বছর পর পর তিনি বাড়ি আসতেন। বর্তমানে নজির ও শাহনাজের তিন বছরের একটি ছেলে আছে।
গতকাল গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসাধীন শাহনাজের সঙ্গে। পাশে ছিলেন তাঁর মা রহিমা বেগম ও বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক। শাহনাজ বলেন, ‘১৭ আগস্ট রাতে নজির বাড়িতে আসেন। আসার পরই তাঁর মা পিয়ারজান বিবি ও বোন রাজিয়া আমার চরিত্র সম্পর্কে নানা মিথ্যা কথা বলেন। এতে আমার সম্পর্কে নজিরের খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। পরদিন গভীর রাতে নজির ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রথমে আমাকে জুতাপেটা করেন। পরে দুই হাত বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান ও বাঁ চোখ জখম করেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে আমাকে উদ্ধার করে রাতেই গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।’
রহিমা বেগম ও আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও ননদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে হচ্ছে শাহনাজকে। কিন্তু কখনোই বিষয়টি তাঁদের জানাতেন না। মিথ্যা অপবাদ শুনে নজির যেভাবে মেরেছেন, তাঁরা এর বিচার চান।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল দুপুরে নজিরদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নজিরের মুঠোফোনও ছিল বন্ধ।
নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলাউদ্দিন মৃধা। তিনি বলেন, ‘আমরা যত দূর জানি, দরিদ্র পরিবারের শাহনাজ খুবই ভালো মেয়ে। প্রেম করে বিয়ে করায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁর ওপর বর্বর নির্যাতনের বিচার চাই।’
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাসার বলেন, এ বিষয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি।