বিদ্যুৎ পেতে ভোগান্তি বাড়াবে টিআইএন

বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে ও পুরোনো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবে বিপাকে পড়বে দেশের ১ কোটির বেশি মানুষ। ২০১৯-২০ সালের নতুন বাজেটে এই প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এতে স্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে পড়বেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন ৩ কোটি ৩৪ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন।

এর আগে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হতো আবেদনকারীর দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের সনদ।

বিদ্যুৎ বিভাগ অবশ্য টিআইএন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার বিপক্ষে। তারা মনে করে, মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের করের আওতায় আনতে টিআইএন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব মধ্যবিত্ত, সচ্ছল ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু যাঁদের মাসে দেড় থেকে দুই শ টাকা বিদ্যুতের খরচ হয়, এঁরা হতদরিদ্র, সে কারণে তাঁদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। এসব মানুষকে টিআইএন দেওয়াটা বাধ্যতামূলক করলে ভোগান্তিতে পড়বেন তাঁরা। যাঁদের মাসিক বিদ্যুতের খরচ ৫০০ টাকা, তঁাদের টিআইএন দেওয়াটা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব আমরা করব।’

দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন মফস্বল শহর ও গ্রামগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের (আরইবি) সমিতিগুলোর। আরইবির গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৫৮ লাখ। আর আরইবি অঞ্চলে মাসে মাত্র ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন—এমন গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ। এসব গ্রাহককে সরকার হতদরিদ্র বিবেচনা করে তাঁদের বিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এদের একটি বড় অংশ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা।

>বাজেট ২০১৯–২০
বিদ্যুৎ–সংযোগ ও বিল নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন আরইবির গ্রাহকেরা

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সব থেকে বেশি দরিদ্র মানুষকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এদের টিআইএন সনদ পাওয়া অনেক কঠিন বিষয়। বাজেটে যেহেতু এটি প্রস্তাব করা হয়েছে, এখনো অনুমোদন হয়নি। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাব, যাতে এটি অনুমোদন না হয়।’

দেশে বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বছরে আড়াই লাখ টাকা। এর বেশি অর্থ আয় করলেই কেবল কর দিতে হয়। কিন্তু এর চেয়ে কম আয় করেন—এমন ১ কোটির বেশি লোক রয়েছেন, যাঁরা বিদ্যুতেরও গ্রাহক। নতুন নিয়মে এঁরাই বেশি বিপদে পড়বেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রস্তাবের কারণে রাজস্ব বাড়বে না। উল্টো মানুষের হয়রানি বাড়বে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিল আদায়ে জটিলতা বাড়বে। যাঁরা এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের দেশের বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। হতদরিদ্র বলেই সরকার যার জন্য বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬০ পয়সা ঘোষণা করেছে, সেই ব্যক্তির কীভাবে টিআইএন থাকবে। এটি বাস্তবতাবিবর্জিত একটি প্রস্তাব। এ প্রস্তাব অনুমোদন হওয়া উচিত নয়।