বিদ্যুৎ-সংযোগই নেই, তবু বিলখেলাপি মামলায় জেল

কারাগারে যাওয়ার মতো অপরাধ করেননি নূর ইসলাম (৩০)। দিনমজুরির আয় দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়া তাঁর কাছে রীতিমতো বিলাসিতা। এরপরও বিদ্যুতের বিল খেলাপের মামলায় তাঁকে ১৩ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে।
নূর ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউরী গ্রামে। পুলিশ তাঁকে গত ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। ২২ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। তবে এ ঘটনায় পুলিশের কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নূর ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। এ সময় তাঁর ছোট বোন রুমা আক্তার বলেন, ৯ মার্চ ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে দুজন পুলিশ এসে বাড়িতে কড়া নাড়ে। তাঁর ভাইয়ের নাম জানতে চায়। এরপর পুলিশ তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলে যায়। বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়ার মতো আর্থিক সংগতি তাঁদের নেই। টাকা দিতে পারবেন না বলে আশপাশের কেউ তাঁদের পার্শ্বসংযোগ দেননি। তারপরও তাঁর ভাইকে বিদ্যুতের বিলখেলাপি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রামের কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করেননি।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুলিশের ভাবগতি দেখে মনে হয়েছিল, তারা ভয়ংকর কোনো আসামির সন্ধান পেয়েছে। মো. শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, একটু কথা বলার মতো সুযোগ দেয়নি পুলিশ। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখতে চায়নি তারা।
থানা-পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ইকরিয়াকান্দা গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলামের নাম লেখা ছিল। কিন্তু পুলিশ জীবিত ছফির উদ্দিনের ছেলে ও নাউরী গ্রামের নূর ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
তবে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম খান গতকাল বলেন, ভুলটি পুলিশের নয়, হতে পারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর আওতাধীন ঈশ্বরগঞ্জের উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. গোলজার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের তালিকায় বিলখেলাপি হিসেবে একই ইউনিয়নের ইকরিয়াকান্দা গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল আমীনের নাম ছিল। নাউরী গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের ছেলে নূর ইসলাম তাঁদের গ্রাহক নন। বিলখেলাপি হিসেবে নুরুল আমীনের বদলে কাগজপত্রে নুরুল ইসলাম লেখা হয়। এ কারণে সমিতির এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর (ইসি) মো. ইদ্রিস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নূর ইসলাম বলেন, কারাগারে থাকার সময় তিনি ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারেননি। শুধু ভেবেছেন, কেন তাঁর এই শাস্তি। কী অপরাধ করেছেন তিনি। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও তিনি কাজকর্মে মন বসাতে পারছেন না।