বিনিয়োগ সহজ হলে সৌদি ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন

২০২০ সালের মার্চে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সৌদি আগ্রহের ধারাবাহিকতায় তিনি নানা প্রয়াসে যুক্ত থেকেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে সৌদি আরবের অগ্রাধিকার নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ

ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

চিরাচরিতভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের বড় ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ। বিষয়টি সৌদি আরব কীভাবে দেখে?

ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান: করোনা মহামারির সময় কর্মী নিয়োগ বন্ধ বা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের কর্মীদের নেওয়া অব্যাহত ছিল। এই মুহূর্তে সৌদি আরবের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। তবে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজতর করতে দালালের দৌরাত্ম্য কমানোটা জরুরি। কারণ, এসব দালাল বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে সমস্যা তৈরি করছেন। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক, নার্সসহ দক্ষ কর্মী নিতে চাই।

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মী সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি আরবে যাওয়ার পর নারী কর্মীদের মৃত্যু ও নির্যাতনের ঘটনার বেশ কিছু অভিযোগ আছে। বাংলাদেশের নারী কর্মীরা সৌদি আরবে যাওয়ার পর কেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন?

ঈসা বিন ইউসুফ: বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তির শুরু বাংলাদেশ থেকে। বিদেশে যাঁরা কর্মী পাঠান, তাঁরা বাংলাদেশের লোকজনকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়ে তাঁরা প্রাসাদে থাকবেন, হাজার হাজার ডলার বেতন পাবেন। এ ধরনের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের সৌদি আরবে নেওয়া হয়। এরপর ওই সব কর্মী গিয়ে দেখেন, সৌদি আরব নিয়ে যেসব স্বপ্ন তাঁরা দেখেছেন, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।

সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের জন্য কোনো খরচ নেই। সৌদি নিয়োগকর্তারাই ভিসাসহ সব ধরনের খরচ দিয়ে থাকেন। অথচ বাংলাদেশের দালালেরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল টাকা নিয়ে লোকজনকে ফাঁদে ফেলেন। এটা গেল একটি দিক।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন যেভাবে তা সরলীকরণ করা হয়, তা মোটেই ঠিক নয়। কেউ নির্যাতনের শিকার হলে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সৌদি আরবের নাগরিক কিংবা বিদেশি সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক নারীকে হত্যার জন্য সৌদি এক নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আইন ভাঙলে তাঁকে শাস্তি পেতে হয়।

■ কর্মী নিয়োগ সহজ করতে দালালের দৌরাত্ম্য কমানো জরুরি।

■ সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ।

■ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী সৌদি ব্যবসায়ীরা।

■ পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চায় সৌদি।

■ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাংলাদেশের প্রতি গুরুত্বের প্রতিফলন।

প্রশ্ন :

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটি শ্রমবাজার থেকে এখন অর্থনীতি, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের বাঁকবদলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ঈসা বিন ইউসুফ: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তিনি তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চান। সম্পর্ক সম্প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যে খাতগুলোতে সৌদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে, তাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে নজর দেবে। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ সহজতর করার বিষয়ে তারা মনোযোগ দেবে। এটা হলে সারা বিশ্বে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন এমন সব শীর্ষস্থানীয় সৌদি আরবের বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসতে উৎসাহ বোধ করবেন।

প্রশ্ন :

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে। ওই সফর রাজনৈতিক সহযোগিতা গভীর করার ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রেখেছে?

ঈসা বিন ইউসুফ: ২০১৯ সালের আগে ছয় বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচবার সৌদি আরবে গেছেন। তাঁর এসব সফর প্রমাণ করে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতার প্রতিফলন। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব সম্পর্ক জোরদারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ বাংলাদেশে আসছেন। তাঁর এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। এই সফর প্রমাণ করে বাংলাদেশকে কতটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে সৌদি আরব।

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক সময় সৌদি আরবের পরিবহনমন্ত্রী সালেহ বিন নাসের আল-জাসেরসহ একাধিক মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এসব সফরে ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিষয়ে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলোতে অগ্রগতি কতটা?

ঈসা বিন ইউসুফ: সৌদি পরিবহনমন্ত্রীর সফর হয়েছে মাত্র দুই মাস আগে। কাজেই ওই সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা এত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে, এমনটা আশা করি না। তবে ওই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে যেসব বাধা আছে, তা দূর করা হবে। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়গুলো সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে এটা ঠিক যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়া থাকে। আশা করি, এটা বড় বাধা হয়ে থাকবে না। সম্প্রতি এ বিষয়ে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগের সিদ্ধান্তগুলোর ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের বৃহদায়তন অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে সৌদি আরব কতটা আগ্রহী?

ঈসা বিন ইউসুফ: অর্থায়নের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনা করছেন। জাহাজ নির্মাণশিল্প, চিকিৎসাসামগ্রী নির্মাণ, সার উৎপাদন, কাগজ কারখানা, গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ, তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধ উৎপাদনসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি বিনিয়োগকারীরা। বন্দর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশে ১২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। মূলত তারা চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া পাওয়ার বাংলাদেশে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে এরই মধ্যে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সৌদি আরবের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল খাতে ১৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সৌদি আরবের অন্তত ২৩টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

প্রশ্ন :

বেশ কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের আল সালেম এভিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান লালমনিরহাট বিমানবন্দরে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ওই বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক সংযুক্তির কেন্দ্রে পরিণত করতে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রস্তাবের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কী হলো?

ঈসা বিন ইউসুফ: দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ওই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

প্রশ্ন :

তার মানে আপনারা বাংলাদেশের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন?

ঈসা বিন ইউসুফ: প্রস্তাবটি পাঁচ বছর আগে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে ওই প্রস্তাবের বিষয়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বিনিয়োগ করতে চায়, তারা দ্রুত পুঁজিটা কাজে লাগানোতে মনোযোগ দিয়ে থাকে। বিনিয়োগ যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে, মুনাফাও আসে তাড়াতাড়ি। আমার মতে, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল এবং বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে বিনিয়োগের বিষয়ে পিছিয়ে থাকবে না। সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগে আগ্রহী।

প্রশ্ন :

ওমরাহ ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সৌদি আরবে কি নতুন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে?

ঈসা বিন ইউসুফ: সৌদি রূপকল্প ২০৩০–এর অন্যতম অগ্রাধিকার পর্যটন। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ পর্যটক সৌদি আরব সফর করেন। আমরা প্রাথমিকভাবে অন্তত ৩০টি দেশকে যুক্ত করে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছি। এর মধ্যে যাঁরা পর্যটক হিসেবে সৌদি আরব সফরে এলেন, তাঁদের জন্য খ্যাতনামা হাসপাতালগুলোতে বিশেষ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকবে। আবার যাঁরা ওমরাহ করতে সৌদি আরব সফর করবেন, তাঁদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার বিষয়টি এই পরিকল্পনায় আছে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে যুক্ত করার বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছি। সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন মন্ত্রী যুক্ত এমন একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার চিঠির জবাব পেলে কাজ শুরু করব।

প্রশ্ন :

পরিবেশবান্ধব সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন?

ঈসা বিন ইউসুফ: সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পরিবেশবান্ধব সৌদি আরব ও পরিবেশবান্ধব মধ্যপ্রাচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প। সৌদি আরবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে নিজেদের দেশের পাশাপাশি আমরা মধ্যপ্রাচ্যের পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা সমাদৃত। এই ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে পুরস্কৃত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। সবুজ এলাকার পরিধি বাড়ানো, চাষাবাদের বিষয়ে বাংলাদেশের কৃষকের অভিজ্ঞতা এবং তাঁদের দক্ষতা থেকে আমরা শিখতে চাই। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের আবহাওয়া উপযোগী চারা ও গাছ আমরা আমদানি করতে চাই। নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এ বিষয়টিকেও আমরা যুক্ত রাখছি।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরবে যাওয়ার পর ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অবৈধ হয়ে পড়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। এটি কি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে?

ঈসা বিন ইউসুফ: সংখ্যাটি কিন্তু এখন আর ৫০ হাজার নয়। বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি আরব গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে এখন ৬৮ হাজার হয়েছে। ছয় বছর আগে সৌদি আরব বিষয়টি সুরাহার কথা আলোচনায় তোলে। এ নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি রয়েছে। দুই দেশের কাছেই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ওই সব মানুষকে পাসপোর্ট কিংবা কোনো ধরনের পরিচয়পত্র দিতে রিয়াদ ও জেদ্দায় বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা রোহিঙ্গাদের নাম, পাসপোর্ট, সৌদি আরবে প্রবেশের তারিখসহ বিস্তারিত তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছি। আমরা চাই, তাঁদের এমন কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হোক, যাতে তাঁদের সৌদি আরবে থাকাটা বৈধ হয়। দুই বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমার অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল এ সমস্যা সমাধান করা। যদি কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টে গিয়ে থাকেন, তাঁদের পাসপোর্ট নবায়ন করা হোক। ওই ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা যাঁরা সৌদি আরবে গেছেন, তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে না। এই লোকগুলো প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। তাঁরা স্কুলে সন্তানদের নিবন্ধন করাতে পারছেন না। ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন না। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাঁরা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। সৌদি আরব রাষ্ট্রহীন নাগরিককে রাখবে না। বাংলাদেশও এটা করবে না। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ওই ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে ১ হাজার ৬০০ জনের পাসপোর্ট নবায়ন করছে। ভাবতে পারেন, ৬৮ হাজার লোকের তালিকা থেকে মাত্র ১ হাজার ৬০০ জনের পাসপোর্ট নবায়ন করা হলে ওই তালিকা শেষ করতে কত দিন লাগতে পারে? আমরা এই কাজে গতি আনতে চাই। দুই পক্ষের জন্য এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়াটা জরুরি।

প্রশ্ন :

আপনাকে ধন্যবাদ।

ঈসা বিন ইউসুফ: আপনাকেও ধন্যবাদ।