বিলখেলাপিদের জন্য ইসির আরেকটু ‘ছাড়’

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ (কোম্পানি) পরিশোধের সুযোগ আছে। কিন্তু কৃষিঋণ এবং বিভিন্ন সেবা খাতের বিল খেলাপি থাকলে তা পরিশোধ করতে হয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাত দিন আগে। কৃষিঋণ ও বিলখেলাপিদের বিষয়েও এবার নমনীয় হতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই দুই খেলাপির ক্ষেত্রেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সুযোগ দিতে চায় ইসি। এটিসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) মোট ১০টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব তৈরি করছে ইসি।

গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশনাররা এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদের শেষ সময়ে এসে আরপিও সংশোধন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। শেষ সময়ে এসে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে বিষয়টি নতুন কমিশনের ওপরই ছেড়ে যাওয়া উচিত। কারণ, নতুন কমিশনের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

ইসি সূত্র জানায়, আরপিওতে যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ ও বিলখেলাপিদের বিল পরিশোধের সময় দেওয়া, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে সময় আরও ১০ বছর বাড়ানো, নিবন্ধনের জন্য সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে জমা দেওয়া, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের পোস্টাল ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা ইত্যাদি। এ ছাড়া পোস্টাল ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন অনলাইনভিত্তিক করারও প্রস্তাব আছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এসব বিষয় নিয়ে আবারও আলোচনায় বসবেন নির্বাচন কমিশনাররা।

শেষ সময়ে এসে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরপিওতে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় আছে। আমরা কি এটা এভাবে রেখে দিতে পারি? এ রকম কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আমাদের অ্যাড্রেস করে যেতেই হবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আইনে যুক্ত হয়েছিল। তখন আরপিওতে একটি বিধান যুক্ত করে বলা হয়েছিল, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। ২০২০ সালের মধ্যে দলগুলোকে এই শর্ত পূরণ করতে হবে। তবে ২০২০ সাল চলে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো দল ওই শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

বিলখেলাপিদের বিষয়ে নমনীয় থেকে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বড় ঋণের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ রাখা হলেও ছোট ঋণ ও বিলের ক্ষেত্রে এই সংশোধন হয়নি। এখানে একটি অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। যে কারণে সংশোধনী আনা প্রয়োজন।

বদিউল আলম মজুমদার,সম্পাদক, সুজন
প্রার্থী হওয়ার জন্য সব ধরনের ঋণ ও বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে আগের বিধানেই ফিরে যাওয়া উচিত। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাত দিন আগে সব ঋণ ও বিল পরিশোধ করতে হবে। না হলে বড় বড় ঋণখেলাপি পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
—বদিউল আলম মজুমদার,সম্পাদক, সুজন

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান কমিশন তাদের মূল কাজটিই যথাযথভাবে করতে পারেনি। তারা জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এখন শেষ সময়ে এসে আইন সংস্কারে হাত দেওয়া উচিত হবে না। আর যদি আইন সংস্কার করতেই হয়, তাহলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১০ বছর সময় বাড়ানো কোনোভাবেই উচিত হবে না। কারণ, যত বেশি সময় দেওয়া হবে, দলগুলো তত কালক্ষেপণের সুযোগ পাবে। এক-দুই বছর সময় বাড়ানো যেতে পারে।

বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী হওয়ার জন্য সব ধরনের ঋণ ও বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে আগের বিধানেই ফিরে যাওয়া উচিত। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাত দিন আগে সব ঋণ ও বিল পরিশোধ করতে হবে। না হলে বড় বড় ঋণখেলাপি পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।