বিলে আসন পেতেছে পদ্ম
শরতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। বিলে আসন পেতেছে জলপদ্ম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট দুটি গ্রামের প্রায় ১২০ একর বিলজুড়ে জলে ভাসছে পদ্ম। শিশু-কিশোরেরা ডিঙ্গি নৌকায় করে তুলে আনছে ফুল। ফুটন্ত ফুলের ভেতর থাকা ফল মজা করে খায় শিশুরা। আবার এই ফুল চার থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রিও করে তারা। প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ ফুল তোলে শিশুরা।জানা গেছে, আখাউড়ার ভারত সীমান্তঘেঁষা মিনারকুট ও ঘাগুটিয়ায় আছে দুটি পদ্মবিল। এর মধ্যে ঘাগুটিয়া বিলের কয়েক জায়গায় দুই দেশের সীমানা পিলার। পিলারের পশ্চিমপাড় বাংলাদেশের আখাউড়া এবং কসবা; আর পূর্বপাড় উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরার মাধবপুর গ্রাম। শারদীয় দুর্গাপূজার আগে বিলে দুই দেশের মানুষই ব্যস্ত হয় পদ্ম তুলতে।স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউসুফ মিয়া জানান, ফাল্গুন মাস থেকে পদ্ম ফোটা শুরু হয়। শ্রাবণ মাসে বিল আলোকিত হয় পদ্মরঙে। কার্তিক মাসে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পদ্ম ফোটা বন্ধ থাকে। মিনারকুটের ফজলুর রহমান বলেন, বিল দুটিতে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্ম ফুটছে। ছোট ছেলেমেয়েরা পদ্মের কলি আর ফল কাঁচা খায়। পূজার সময় স্থানীয় বাজার এবং ত্রিপুরার আগরতলায় এই ফুল বিক্রিও করা যায়।পদ্ম একটি সুন্দর জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifeৎa. গোলাপি রঙের এই ফুল পানির পৃষ্ঠদেশ থেকে কয়েক সেন্টিমিটার উচ্চতায় একটি সরু বোঁটার ওপর ফুটে। এর পাতা গাঢ় সবুজ ও গোলাকার। পানির ওপর ভেসে থাকে। পদ্ম পবিত্র ফুল হিসেবে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়।আখাউড়ার শ্রীশ্রী রাধামাধব আখড়ার পুরোহিত মিবল চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয় ষষ্ঠীতে বোধনের মাধ্যমে। অষ্টমী তিথিতে ১০৮টি জলপদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা অর্চনা করা হয়। পদ্মে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, নারায়ণসহ অন্য দেবদেবীরাও তুষ্ট হন।’দেবগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক অলক কুমার চক্রবর্তী জানান, পদ্ম বাংলাদেশের সব জায়গাতেই পাওয়া যেত। এখন সহজলভ্য নয়। নানা প্রতিকূলতার কারণে এই জলজ উদ্ভিদটি আজ হুমকির মুখে। আখাউড়ার পদ্ম বিলের পরিচর্যা করা গেলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যেত বলে মনে করেন তিনি।