বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমচাষি, বছরে আয় কোটি টাকা

সোহেল রানা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামে নিজ বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর আর দশজনের মতো চাকরি নিয়েছিলেন সোহেল রানা। তবে বেশি দিন চাকরি করেননি। ফিরে গেছেন গ্রামে। হয়েছেন আমচাষি। এখন তাঁর বাগান থেকে বছরে এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের আম বিক্রি হয়।

সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর আমবাগানে জমির পরিমাণ ১০৫ বিঘা। রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমের গাছ। এই বাগান ছাড়াও জেলার পত্নীতলা উপজেলার রূপ গ্রাম এলাকায় সোহেল রানার ৪০ বিঘা জমির আরেকটি আমবাগান রয়েছে।

সোহেল রানা বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার বাগানে গত বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে। দাম গত বছরের মতো থাকলে এ বছর ১ কোটি ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমের পেছনে অনেক খরচ। সেসব খরচ বাদ দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা থাকবে বলে আশা করছি।’

সোহেল রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। পড়াশোনা শেষে ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিকের ফিচার বিভাগে চাকরি নিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে সেই চাকরি ছেড়ে মিশ্র ফলের বাগান করেন। দুই বছর পরই ফল ধরতে শুরু করে। ২০১৮ সালে নওগাঁর সাপাহারের গোডাউনপাড়া এলাকায় ১০৫ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো ট্যুরিজম পার্ক’ নামের আরেকটি আমের বাগান।

সোহেলের বাগানে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আম্রপালি জাতের আমের গাছ। পাশাপাশি তিনি বারি-৪, বারি-১১, গৌরমতি, হাঁড়িভাঙা, ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, কাটিমন ও ফজলি জাতের আমগাছ লাগিয়েছেন। রেড পালমার, বানানা, টেনসিংটন প্রাইড, মিয়াজাকি, অস্টিন, গিলানি ও রুবি জাতের আমগাছও রয়েছে তাঁর বাগানে।

নওগাঁয় গত এক দশকে আমের বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে। ধানে লাভ না থাকায় আবাদি জমিতে আমবাগান করছেন চাষিরা। তাতে যুক্ত হচ্ছেন সোহেল রানার মতো অনেক তরুণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দুই জেলার একটি এখন নওগাঁ। অন্যটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় বছর বছর বাড়ছে আমবাগানের সংখ্যা ও পরিসর।

সোহেল রানা জানান, তাঁরা তিন ভাই। এক ভাই চাকরি করেন। তাঁরা দুই ভাই বাগান তদারক করেন। তিনি বলেন, ‘ফল বাগান করে এক বছরে যে আয় হয়, তা চাকরি করে উপার্জন করতে ১০ থেকে ১২ বছর লাগত।’