বিশ্বভারতীকে ১০ কোটি রুপি দিল বাংলাদেশ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে ১০ কোটি রুপির চেক তুলে দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনর তৌফিক হাসান। ছবি: সংগৃহীত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে ১০ কোটি রুপির চেক তুলে দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনর তৌফিক হাসান। ছবি: সংগৃহীত

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০ কোটি রুপি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আজ মঙ্গলবার বিকেলে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়। চেক তুলে দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনর তৌফিক হাসান।

এ সময় কলকাতা উপহাইকমিশনে নিযুক্ত কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ, প্রথম সচিব মোফাকখারুল ইকবাল, বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ভবনের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং বিশ্বভারতীর কর্মসচিব সৈকত মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ভবনের দ্বার সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীসহ বিশ্বভারতীর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এই বাংলাদেশ ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ২৫ মে উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বাংলাদেশ ভবন গড়া হয়েছে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির ইন্দিরা গান্ধী সেন্টার আর শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের কাছে। এই ভবন নির্মাণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল ২ বিঘা জমি। আর এই জমিতেই বাংলাদেশ সরকার এই ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছিল ২৫ কোটি রুপি। এই বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া বাংলাদেশ ভবনের নকশা অনুযায়ী। এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে। ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন। অনুষ্ঠান করার সর্বাধুনিক একটি মঞ্চ। রয়েছে দুটি সেমিনার হল। একটি গ্রন্থাগার, একটি জাদুঘর, একটি গবেষণা ঘর, একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষ এবং একটি বড় মাপের ক্যাফেটরিয়া।

বাংলাদেশ ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বাংলাদেশ ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের একটা বড় সময় অতিবাহিত হয়েছে বাংলাদেশে। সেই ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত। কবিগুরুদের বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর আর শাহজাদপুরে ছিল বাড়ি। সেখানে কবিগুরু দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। এখানে অবস্থানকালীন কবিগুরু তাঁদের জমিদারি দেখভালও করতেন। থাকতেন এখানে কবিগুরুর সহধর্মিণীসহ তাঁদের সন্তানেরা। সে সময় কবিগুরু তাঁর সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য নিজগৃহেই চালু করেছিলেন পাঠশালা। কবিগুরু বাংলাদেশে অবস্থানকালে ঘুরতেন নৌকা বা বোটে। ছিল তাঁর দুটি বোট পদ্মা ও চপলা। কবিগুরু এই বোটে চড়ে বহু কবিতা ও গান লিখেছেন। আর সেসব স্মৃতির কথা এবার উঠে এসেছে বাংলাদেশ ভবনে। যদিও বিশ্বভারতীর অনুরোধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র জাদুঘরের জন্য উপহার দিয়েছেন সেই পদ্মা ও চপলা বোটের রেপ্লিকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার জন্যও দিয়েছে এই বোটের রেপ্লিকা।

কবিগুরুর স্মৃতিবাহী নানা সামগ্রী, স্মারক নিয়ে এবার বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সাজিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগারকেও। জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নানা ছবিসহ কবিগুরুর জীবনের নানা কথা, বিশেষ করে বাংলাদেশ অবস্থানের নানা স্মৃতিবাহী ছবি, পাণ্ডুলিপি, স্মারকসহ আরও নানা দ্রষ্টব্য।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।