বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে দেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলব: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলব, যাতে বিশ্বের কাছে কোনো বাঙালিকে আর মাথা নিচু করে চলতে না হয়।’ দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন-অগ্রগতিকে আলোর পথের যাত্রা আখ্যায়িত করে তা অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদানকালে ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার বিতরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমগ্র জাতির কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাধীন এ দেশকে আমরা এমনভাবে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলব, যাতে বাঙালি জাতিকে আর বিশ্বের কারও কাছে মাথা নত করে চলতে না হয়। আমরা উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করেই এগিয়ে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আলোর পথের এই যাত্রা অব্যাহত থাক। বাংলাদেশের মানুষ সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন লাভ করুক।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘যে জাতি মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়, স্বাধীনতার জন্য বুকের রক্ত দিয়ে যায়, সে মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না। সে কথা বলে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। আমিও তা বিশ্বাস করি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, সে যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তা ধরে রেখে এর সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব, এটাই আমাদের লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা ভাবের পাশাপাশি দেশে দেশে খাদ্যসংকট থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারা বর্তমান সরকারের সাফল্য বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বেসরকারি খাতে গণমাধ্যমকে ছেড়ে দেওয়ায় এর অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে অনেক ছোটখাটো বিষয়ও সামনে চলে আসে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্যসংকটের যে বিষয় রয়েছে, তা তারা প্রচার করে না।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘প্রচার না করলেও আমরা জানি, অনেক উন্নত দেশে ব্যাপকভাবে খাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি যারা সারা বিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ায়, তাদেরও অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কিন্তু সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও করোনা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

‘আলোর পথের এই যাত্রা অব্যাহত থাক। বাংলাদেশের মানুষ সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন লাভ করুক।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এই সাফল্যের জন্য সহকর্মী ও সংশ্লিষ্টদের দিনরাত পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য তিনি তাঁর দলসহ সব সহযোগী সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি লোকেরা যেমন করেছে, তেমনি আমার দলের লোকেরাও আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সহযোগিতা করেছে।’

‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের আনাচকানাচে অনেক মানুষ ছড়িয়ে আছেন, যাঁরা মানুষের সেবা করেন নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকেও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাঁদেরও পুরস্কৃত করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, যাঁরা মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন, এমন অনেকেই রয়েছেন, তাঁরা কখনো প্রচারে আসেন না। তাঁরা দৃষ্টিসীমার বাইরেই থাকেন। কিন্তু তাঁদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করা উচিত এ করণে যে তাঁদের দেখে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ অন্যরা শিক্ষা লাভ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সেবা ও কল্যাণের মধ্য দিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, হাজার ধনসম্পদ বানালেও সেটা হয় না। কাজেই সেভাবেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

করোনাকালীন অবস্থার উত্তরণে সশরীরে স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারায় অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ও সম্মানিত বোধ করছেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি মঞ্চ থেকে নেমে এসে জীবিত দুই মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুদ্দীন আহমেদ ও আব্দুল জলিলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এ বছর ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম (মরণোত্তর), মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ও সিরাজুল হক (মরণোত্তর)।

‘চিকিৎসাবিদ্যায়’ পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম। ‘স্থাপত্য’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন।

‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এ ছাড়া ‘মুজিব বর্ষে’ বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নে সাফল্যের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

প্রত্যেক পুরস্কারপ্রাপ্তকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও একটি সম্মানী চেক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। তিনি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার পদক-২০২২’ বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে শোনান।

অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।