বৃষ্টিতেও মেলায় ছিল ভিড়

মেলার অনেক প্যাভিলিয়ন গতকাল পলিথিনের পোশাক পরেছিল। এ ছাড়া উপায় ছিল না। প্রকৃতি জানান দিচ্ছিল, বৃষ্টি হবে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি প্রায় পুরো বিকেলটাকে আঁকড়ে ধরেছিল। বৃষ্টির কারণে মেলা থাকবে মনুষ্যহীন, এ রকম যাঁরা ধারণা করেছিলেন, তাঁরা ভুল করেছিলেন। মেলায় অনেক মানুষ এসেছে এবং লক্ষ করার মতো ব্যাপার হলো, প্রায় কারও হাতেই ছাতা ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি স্বাধীনতাস্তম্ভকে পেছনে রেখে সেলফি তোলায় বাদ সাধতে পারেনি। বইয়ের স্টল বা প্যাভিলিয়নের সামনে মাঝারি ভিড় ছিল, কিন্তু তাতে খুব যে কেনাকাটা হচ্ছিল, এমন মনে হচ্ছিল না।

একট ছোট্ট মিছিল এগিয়ে চলেছিল হালকা বৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়েই। পাঁচজনের এই দলে ছিল দুজন মা আর পাঁচ, ছয় ও আড়াই বছরের তিন ছেলে। জেসমিন সুলতানা তাঁর ছেলে আরিয়ান জারিফকে নিয়ে বইমেলায় এসেছেন ফরিদপুর থেকে। ঠিকই শুনছেন, শুধু বইমেলা থেকে বই কিনবেন বলেই এসেছেন। সঙ্গে ছিলেন আসমা পারভীন তাঁর দুই ছেলে ঈপ্সিত অনার্য অহং আর আয়ুষ্মান অনার্য ঐক্যকে নিয়ে। তাঁরা অবশ্য ঢাকাতেই থাকেন। সন্তানদের হাতে লাঠিতে বাঁধা বেলুন। মায়েদের হাতে বই।

‘ফরিদপুর থেকে এসেছেন শুধু বই কেনার জন্য?’

‘হ্যাঁ। প্রতিবছরই আসি।’

‘ওদের জন্য কী বই কিনলেন?’

‘ওরা বইয়ের পোকা। নিজেদের পছন্দে কয়েকটা বই কিনেছে। আরও কিনব।’

লিও লিওনি (প্রচ্ছদে লেখকের নাম নেই), চৈতি রহমানের কুয়োর ব্যাঙটি, নাজিয়া ফেরদৌসের পরী রাজ্যের রূপকথা ছাড়াও আরও কয়েকটি বই উঁকি দিচ্ছিল ব্যাগ থেকে।

জার্নিম্যান বুকসের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল মোড়ক উন্মোচন চলছে। বইয়ের প্রচ্ছদে লেখা আছে রফিকুন নবী চিত্রিত সুরের পথে একলা হাঁটি। কবিতার এ বইয়ের লেখক তারিক সুজাত। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিল্পী ও কবি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আবুল হাসনাত, মুনতাসীর মামুন, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার, হাসান আরিফ প্রমুখ। মোড়ক উন্মোচনের পর অল্প করে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছিলেন সবাই। আর রফিকুন নবী অসাধারণ সব ছবি এঁকে দিচ্ছিলেন অটোগ্রাফ। তাঁর একটিতে ছিল টোকাইয়ের মুখ।

প্রথমা প্রকাশনে বই দেখতে এসে মো. এনায়েত হোসেন উল্লসিত হয়ে বললেন, ‘দিন দিন এই বইটাই তো খুঁজছি!’

দেখা গেল, তিনি নিচ্ছেন জাভেদ হুসেন অনূদিত মির্জা গালিবের গজল

‘কেন নিলেন এই বই?’

‘অনেক নাম শুনেছি মির্জা গালিবের। বহুদিন ধরেই খুঁজছিলাম বইটি।’

প্রথমা প্রকাশনের উম্মে কুলসুম জানালেন, আজ নতুন এসেছে প্রদীপ দেবের মঙ্গলে অভিযান, নাওয়াল-আস সাদাবির শূন্য বিন্দুতে নারী, অনুবাদ করেছেন ফারহানা আজিম, রকিব হাসানের রুপার সিন্দুক, মাহবুব তালুকদারের হেডস্যার

পাঠক সমাবেশ থেকে এসেছে বর্ণালী সাহার দ্য নর্থ এন্ড। বাতিঘর থেকে এসেছে উমবের্তো একোর গোলাপের নাম, অনুবাদ করেছেন জি এইচ হাবীব। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ পেয়েছে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবেরের উপন্যাস ত্রয়ী। পাঠক সমাবেশ এনেছে টোকন ঠাকুরের কাপ্তেন, গভীর সমুদ্রে চলো।