বেআইনি কাজ করায় সৌদি নাগরিককে দেশে ফেরত

সালেহ ওবায়েদ আলানাজি

বেআইনি কাজে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক সৌদি নাগরিককে দেশে পাঠিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। মানব পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, হোটেলের বিল পরিশোধ না করা এবং ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, থানা-পুলিশ এবং সৌদি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ওই সৌদি নাগরিকের নাম সালেহ ওবায়েদ আলানাজি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি অন অ্যারাইভাল ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এক মাস পরই তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ২২ জুলাই। চার বছর ধরে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। গত মঙ্গলবার সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তাঁকে বাংলাদেশ সরকারের খরচায় দেশে পাঠিয়ে দেয় এসবির ডিপ্লোমেটিক অ্যান্ড প্রটোকল উইং (এসসিও)।

সালেহ ওবায়েদ ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করেছিলেন। এ সময়কালে তাঁর কাছে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিল জমা হয় তাঁদের। কিন্তু বারবার কথা দিয়েও তিনি বিল পরিশোধ করেননি। একসময় টাকা চাইলেই তিনি হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন।

এসবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪১ জন সৌদি নাগরিক অবস্থান করছেন। এর মধ্যে নয়জন বৈধভাবে অবস্থান করছেন। বাকি ৩২ জনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

সালেহ ওবায়েদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে এসবি। সেখানে বলা হয়েছে, সালেহ ওবায়েদ  দীর্ঘ দুই বছর গুলশানের রেফ্লেশিয়া সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে থেকে তাদের বিল পরিশোধ করেননি। তিনি তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন, এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধরও করেছেন।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে সালেহ ওবায়েদ প্রতারণা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুন এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ‘মুসানেট পাসওয়ার্ড’ (সৌদি ভিসা ফি দেওয়ার ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড) সালেহ ওবায়েদ হাতিয়ে নেন। তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির ভিজিটিং কার্ড, সিল ও স্ট্যাম্প নকল করেন। এরপর এজেন্সির মালিকের নামে ভিসা এনে নিজেই ব্যবসা করতে থাকেন। এ ছাড়া গড গিফট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এজেন্সির মালিকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের জেরে সৌদি ভিসা দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা এবং মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এই সৌদি নাগরিক।

রেফ্লেশিয়া সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক রাশেকুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সালেহ ওবায়েদ ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করেছিলেন। এ সময়কালে তাঁর কাছে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিল জমা হয় তাঁদের। কিন্তু বারবার কথা দিয়েও তিনি বিল পরিশোধ করেননি। একসময় টাকা চাইলেই তিনি হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন। বিষয়গুলো জানিয়ে গুলশান থানায় তিনটি জিডি করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। সমাধান চেয়ে সৌদি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করলে তারাও ব্যবস্থা নেয়নি।

সালেহ ওবায়েদ আলানাজি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি অন অ্যারাইভাল ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এক মাস পরই তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ২২ জুলাই। চার বছর ধরে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

রিক্রুটিং এজেন্সি মুন ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোস্তফা কামাল বলছেন, সৌদি এই নাগরিকের প্রতারণায় পথে বসার দশা তাঁর। সালেহ ওবায়েদের প্রতারণা নিয়ে ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করার পর তাঁকে নিষিদ্ধ করে দেয় তারা। এরপর থেকে তিনি আর ব্যবসাই করতে পারছেন না। সরকারকে ১৫ লাখ টাকা লাইসেন্স ফি দিয়েছিলেন, অফিসভাড়া দিয়েছেন মাসের পর মাস। সবই তাঁর ক্ষতি হয়েছে। প্রতারণার বিষয়ে তিনি রমনা থানায় জিডি করেছিলেন।

বাংলাদেশে এলেই সবাই রেসিডেন্স পারমিট পান না। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন বাড়িওয়ালা তাঁদের বাসা ভাড়া দেন। এতে তাঁরা এখানে দীর্ঘদিন থেকে প্রতারণা করার সুযোগ পান। এ বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে কড়া নজরদারিতে রাখে, সে জন্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
শামীম আহমেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসবির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি এই নাগরিকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো তাঁরা অনেক দিন ধরে খতিয়ে দেখছিলেন। তাঁর ভ্রমণ দলিলও পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সালেহ ওবায়েদকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য তাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠাবেন। এতে তিনি আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একদল লোক এ দেশে এসে কারও সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়াই অবস্থান করেন। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে তাঁরা বাইরে লোক পাঠান। তাঁদের কাছে যখন এজেন্সিগুলোর পাওনা বেড়ে যায়, তখন তাঁরা হয় চলে যান অথবা লাপাত্তা হয়ে যান। এতে এজেন্সিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এলেই সবাই রেসিডেন্স পারমিট পান না। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন বাড়িওয়ালা তাঁদের বাসা ভাড়া দেন। এতে তাঁরা এখানে দীর্ঘদিন থেকে প্রতারণা করার সুযোগ পান। এ বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে কড়া নজরদারিতে রাখে, সে জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।