বেকারত্ব, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমের করোনাকাল

নদী থেকে কলমিশাক তুলছে দুই কিশোর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কয়েক কিশোর নদী থেকে শাক তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসারে অর্থের জোগান দেয়। চিরিরবন্দর, দিনাজপুর, ১৯ সেপ্টেম্বরছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার মাঝাপাড়া গ্রামের মেয়ে আক্তারিনা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। গত মার্চে করোনা-বন্ধ শুরু হলে তিনি বাড়িতে চলে আসেন।

তখন থেকে বাড়িতেই আছেন আক্তারিনা। গত ছয় মাসে পড়ালেখা খুব একটা হয়ে ওঠেনি তাঁর। গত জুলাইয়ের গোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। আক্তারিনা মোবাইল ফোনে নিয়মিত ক্লাস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নেটওয়ার্ক দুর্বল। সব সময় ক্লাসে ঢুকতে পারেন না।

আক্তারিনার বাবা আবেদুর রহমান নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। মা-বাবা, ভাইবোন মিলে চারজনের সংসার। ঢাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি দুটি টিউশনি করতেন তিনি। গত দুই মাস বাড়ির পাশের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। পুরো টাকাই তুলে দিয়েছেন বাবার হাতে।

আক্তারিনার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে, মাঝাপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে। আগামী অক্টোবরে তাঁর এমএ পাস করে বেরোনোর কথা ছিল। এখন সেশনজটে পড়লেন। এই সংকটকাল কবে শেষ হবে, তা-ও বুঝতে পারছেন না।

হতাশ গলায় আক্তারিনা বলেন, ‘এমনিতেই অভাবের সংসার। বাবা কষ্ট করে টাকা পাঠাতেন। তাঁর ধারণা ছিল, পড়াশোনা শেষ হলে চাকরি হবে। আমিও ঠিক সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।’

আক্তারিনার মতো তাঁর বড় ভাই আখতারুজ্জামানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ থেকে ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। ৪১তম বিসিএসসহ ১১টি জায়গায় প্রাথমিক আবেদন করেছেন। কিন্তু নিয়োগের পরীক্ষাগুলো স্থগিত রয়েছে।

গত শনিবার আক্তারুজ্জামানও বাড়িতে ছিলেন। বললেন, করোনাকাল শুরু হলে বাড়িতে চলে আসেন। দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেল। চাকরির পরীক্ষা হচ্ছে না। ঢাকায় থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে দলে পড়ালেখার চর্চা ছিল। এখন সবই বন্ধ।

কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তরের দরিদ্র জেলা দিনাজপুরের গ্রাম-শহর ঘুরতে ঘুরতে করোনাকালে অনিশ্চয়তার নানা রকম প্রভাবই দেখা হলো। শেষ যাত্রায় বড় করে নজরে পড়েছে বেকারত্বের ফাঁদে পড়া শিক্ষিত তরুণদের অস্থিরতা, মেয়েদের বাল্যবিবাহ বাড়া এবং শিশুদের শ্রমে নামা।

মা অসুস্থ, তাই গরুর ঘাস সংগ্রহ করতে বের হয়েছে নাহিদ হাসান। সে স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। দিনাজপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর
ছবি : প্রথম আলো

অনিশ্চয়তার অশনিসংকেত

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি বলছে, করোনার আগে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ১০০ জনে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ এখন প্রতি চারজনে একজন বেকার।

সুব্রত রায় ও সুকুমার রায় দুই ভাই। তাঁদের বাড়ি চিরিরবন্দর উপজেলা শহরের সুপার মার্কেট লাগোয়া। সুব্রত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) থেকে গত বছর স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ালেখা শেষ করেছেন। ঢাকার মতিঝিলে স্থপতিদের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

সুব্রত গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিয়ে করতে বাড়িতে এসেছিলেন। তারপর শুরু হলো করোনা–বন্ধ। বিয়ে করেছেন। সেই থেকে বাড়িতে আছেন। অফিসও ডাকছে না। তিনি এখন নতুন চাকরি খুঁজছেন।

সুকুমার রায় পড়ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। তিনি যন্ত্র প্রকৌশলের শেষ বর্ষের ছাত্র। বাড়িতে থেকে অনলাইনে ক্লাস করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু নেটওয়ার্ক দুবল। সব সময় বিদ্যুৎও থাকে না।

তাঁদের বাবা সুবোধ চন্দ্র রায় কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসা করেন। পুঁজির অভাবে গত জানুয়ারি থেকে সেটা বন্ধ। মা বিভা রানী গৃহিণী।

বিভা রানী বলেন, ‘কষ্ট করে চলি। ছেলে দুটাক নিয়া খুব আশা করি আছি। করোনা ভাইরাসোত পড়িয়া বড় ছইলটার চাকরি চলি গেইল। এল্যা খুব সমস্যাত পইড়ি আছি। সামনের দিনোত কী হইবে, কেই জানে?’

১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলা সদরের চত্বরে ‘চিরি নদীর বাতিঘর’ পাঠাগারে বসি। সেখানে এসেছিলেন ‘স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব চিরিরবন্দর’ সংগঠনের কয়েকজন সদস্য। উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত?

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি বলছে, করোনার আগে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ১০০ জনে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ এখন প্রতি চারজনে একজন বেকার।

শিক্ষার্থীদের সংগঠনটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র রায় নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁর হিসাবে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজে এ উপজেলার চার শতাধিক ছেলেমেয়ে পড়ে। অধিকাংশই গ্রামের কৃষিজীবী, শ্রমজীবী পরিবারের।

ক্যাম্পাসে থাকাকালে অনেকেই টিউশনি করে চলতেন। তাঁরা করোনার কারণে বাড়ি ফিরে এসেছেন। পড়ালেখা, আয়রোজগার নেই। সামনে বেকারত্বের আশঙ্কা। তাঁরা মানসিক চাপ ও অস্থিরতায় দিন কাটাচ্ছেন।

তবে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আবুল কাশেম বলছেন, শিক্ষার্থীরা যেন হতাশ না হন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বই সংকটে পড়েছে। অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখার চেষ্টা চলছে। তাঁদেরও ধৈর্য ধরে নিজেদের তৈরি করতে হবে।

কষ্ট করে চলি। ছেলে দুটাক নিয়া খুব আশা করি আছি। করোনা ভাইরাসোত পড়িয়া বড় ছইলটার চাকরি চলি গেইল। এল্যা খুব সমস্যাত পইড়ি আছি। সামনের দিনোত কী হইবে, কেই জানে?
বীভা রানী, গৃহিণী

অনেক তরুণ কিন্তু স্বপ্নও দেখছেন। পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন চিরিরবন্দরের হাবিবুর রহমান। সদর উপজেলার কালিকাপুরে সিলেট কৃষি বিদ্যালয়ের ছাত্র রূপ নারায়ণ রায় বাবার মুদিদোকানে কাজ করছেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশফাক সাদাত হাঁসের খামার করেছেন।

এই তরুণেরা চাকরির আশায় বসে থাকছেন না। তাঁরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

বাল্যবিবাহ বাড়ছে

২০ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নে রামডুবির হাটবাজারের পাশে কয়েকজন শিক্ষার্থীর দেখা পাই। তারা রামডুবির হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত ১৮ মার্চ থেকে স্কুলে সরকারি বন্ধ চলছে। তারা তখন কোচিং করে বাড়িতে ফিরছিল।

এই ছাত্রছাত্রীরা বলল, করোনা–বন্ধের মধ্যে তাদের স্কুলের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির আটজন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এ বছর এসএসসি পাস করা তিন ছাত্রীরও বিয়ে হয়েছে। সরেজমিনে খোঁজখবর করে জানা গেল, ঘটনা সত্য।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ফরমান আলীর বাড়ি সৈয়দপুরে। করোনাকালে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই ছাত্রীদের বিয়ের কথা জানেন না।

বাল্যবিবাহ হচ্ছে, মানছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায়। তবে তিনি বললেন, বেশির ভাগ বিয়ে গোপনে হয়। প্রকাশ পায় পরে। তখন করার কিছু থাকে না।

রামডুবির হাট থেকে বীরগাঁও উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় যাই। জানতে পারি, গত তিন মাসে এই বিদ্যালয়ের চারজন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। তাদের একজন অষ্টম, দুজন নবম এবং আরেকজন দশম শ্রেণিতে পড়ত। এদের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। একজন বীরগাঁও দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। আরেকজন এই স্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পাস করেছে।

দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ি যখন পৌঁছাই, তখন দুপুর। বাড়িতে কেউ ছিল না। তবে একজন প্রতিবেশী বলেন, ওই ছাত্রীর বাবা দরিদ্র। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ভালো পাত্র পাওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

অভিভাবকেরা মেয়েদের দূরের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিচ্ছেন। করোনার কারণে এনজিও কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিরোধের কাজ করতে পারছেন না।
রওশন আরা হক, এনজিও কর্মী

সুন্দরবন ও সদরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীও বলল, গত ছয় মাসে তাদের স্কুলের আটজন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বললেন, করোনাকালের গোড়ায় বাল্যবিবাহ কম ছিল। কিন্তু ক্রমে বেশ কিছু বিয়ের খবর পাচ্ছেন। গত তিন মাসে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে।

জোয়ান্না টুডু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। করোনা–বন্ধে তিনি ঘোড়াঘাটের বিরাহিমপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে থাকছেন। তিনি গত চার মাসে এলাকায় ১০টি বাল্যবিবাহ ঘটতে দেখেছেন। দিনাজপুরের একটি এনজিও পল্লীশ্রীর নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কর্মসূচি আছে। এর সমন্বয়ক রওশন আরা হক বলছেন, করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে।

এ প্রতিবেদককে রওশন আরা বলেন, অভিভাবকেরা মেয়েদের দূরের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিচ্ছেন। করোনার কারণে এনজিও কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিরোধের কাজ করতে পারছেন না।

লেখাপড়া ছেড়ে শিশুরা কাজে

মনির ও মতি দুই ভাই কাহারোল উপজেলার সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। বাড়িতে অভাব। লেখাপড়া ছেড়ে দুজনই বাজারের হোটেলে ঝাড়পোঁছ করার কাজে ঢুকেছে।

মনির ও মতির সঙ্গে কথা হয় ২১ সেপ্টেম্বর। তাদের বাড়ি উপজেলার দশমাইল বাজারের পাশে। তাদের মা দুই মাস আগে পোশাক কারখানায় কাজ করতে ঢাকায় গেছেন। বাবা আলাদা থাকে। খোঁজ নেয় না।

একই বিদ্যালয়ের ছাত্র সোহান। সে–ও দশমাইল বাজারের একটি হোটেলে কাজ করে। তার মা নাসিমা বেগম (৪০) বাসাবাড়িতে কাজ করেন।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে শরীফুল ইসলাম। পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে নদী থেকে কলমি শাক তুলে ইছামতি বাজারে বিক্রি করে সে। চিরিরবন্দর, দিনাজপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর
ছবি : প্রথম আলো

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অবশ্য আশা করছেন, কিছু শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে নানা কাজে ঢুকলেও স্কুল খুললে তারা পড়ালেখায় ফিরবে। সোহানের মা নাসিমা কিন্তু দুশ্চিন্তায় আছেন। ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। বাড়িতে বই নিয়ে মোটেই বসে না।

দশমাইল থেকে সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নে যাওয়ার পথে তুলা উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন রাস্তার ধারে ঘাস কাটতে দেখি নাহিদ হাসানকে। সে রামডুবিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

নাহিদের বাড়ি পাশেই কালিকাপুর রংপুরিয়া পাড়াতে। তার বাবা বেকারিতে কাজ করেন। মা নার্গিস বাড়িতে গরু-ছাগল পোষেন। কিন্তু মা সপ্তাহখানেক ধরে অসুস্থ। নাহিদকেই গরু-ছাগলগুলো দেখতে হচ্ছে।

১৯ সেপ্টেম্বর চিরিরবন্দর উপজেলায় দেখা হয়েছিল রাজাপুর মদন সরকারপাড়া গ্রামের কনক, শংকর ও মানসের সঙ্গে। কনক রাজাপুর এসসি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য দুজন পড়ে রাজাপুর বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে।

এই তিন কিশোর তিন মাস ধরে স্থানীয় বুড়িরহাট বাজারে চায়ের দোকানে কাজ করছে। দিন গেলে তারা ১০০ টাকা করে মজুরি পায়। অভাবের দিন এই টাকাই পরিবারগুলোর সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেখাপড়া আপাতত বন্ধ।

মানসকে বাড়ির গরু-ছাগলও দেখতে হচ্ছে। তার মা দুলালী রানী এ বছর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেয়েছেন। তাঁর সারা দিন কাটে রাস্তার কাজে।

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম কিছুটা বেড়েছে। স্কুল খুললে তাদের ফেরানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অধ্যাপক আবদুল জলিল আহমেদ, সভাপতি, জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি

মদন সরকারপাড়া গ্রামে ৯৫টি হিন্দু পরিবারের বসবাস। কাছাকাছি আরও ২৫টি সাঁওতাল পরিবারের বাস। প্রীতম রায়ের বাড়ি এই গ্রামে।

প্রীতম বলেন, এখানকার অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর। তাদের কাজ বন্ধ। ফলে পরিবারগুলোতে অভাব-অনটন চলছে। অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

রাজাপুর থেকে ফেরার পথে দেখেছিলাম, ইছামতী নদী থেকে কলমিশাক তুলছে দুই বালক। একজন গত বছরই পড়ালেখা বাদ দিয়েছে। অন্যজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

ইছামতী বাজারে চার আঁটি কলমিশাক নিয়ে এসেছিল শরীফুল ইসলাম। সে পশ্চিম মুখদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। স্থানীয় মোকছেদ আলী বলেছিলেন, প্রতিদিন কয়েকজন বালক ইছামতী নদী থেকে কলমিশাক তুলে বিক্রি করতে বাজারে আনে।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক আবদুল জলিল আহমেদ জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি। তিনি বলছেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম কিছুটা বেড়েছে। স্কুল খুললে তাদের ফেরানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।