বেলারুশে ৫০ ভাষায় 'আমার সোনার বাংলা'

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বেলারুশীয় লেখক ইউনিয়নের সদস্য তথ্যমন্ত্রী আলেক্সান্ডার করলুকেভিচ, পাশে গ্রন্থের সংকলক এবং উদ্যোক্তা মুজাহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বেলারুশীয় লেখক ইউনিয়নের সদস্য তথ্যমন্ত্রী আলেক্সান্ডার করলুকেভিচ, পাশে গ্রন্থের সংকলক এবং উদ্যোক্তা মুজাহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে বেলারুশে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। বইটিতে ৪৯টি ভাষায় জাতীয় সংগীতের অনুবাদ ছাপা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে ১ ফেব্রুয়ারি বেলারুশ ন্যাশনাল পাবলিশার ইয়াকুব কোলাস প্রিন্টিং হাউস বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করে। এবার বিশ্বের ৫০ ভাষায় অনুবাদ করা ‘আমার সোনার বাংলা’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ উন্মোচন করা হয় মিনস্কে জাতীয় ইতিহাস জাদুঘর মিলনায়তনে।

বেলারুশের মিনস্কে জাতীয় ইতিহাস জাদুঘর মিলনায়তনে ‘আমার সোনার বাংলা’ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথি ও কূটনীতিকেরা। ছবি:সংগৃহীত
বেলারুশের মিনস্কে জাতীয় ইতিহাস জাদুঘর মিলনায়তনে ‘আমার সোনার বাংলা’ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথি ও কূটনীতিকেরা। ছবি:সংগৃহীত

প্রথম সংস্করণের তুলনায় বইটির পরিমার্জন করা হয়েছে। গ্রন্থের সংকলক বেলারুশীয় লেখক ইউনিয়নের সদস্য তথ্যমন্ত্রী আলেক্সান্ডার করলুকেভিচ এবং বাংলাদেশের নাগরিক মুজাহিদুল ইসলাম। অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন দেশের সুপরিচিত কবিরা। গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রসঙ্গক্রমে আলেক্সান্ডার কারলুকেভিচ বলেন, ‘এই প্রকাশনা বেলারুশ ও বাংলাদেশের মধ্যে একধরনের কূটনৈতিক সাংস্কৃতিক সেতু। প্রথম সংস্করণের তুলনায় অনুবাদসংখ্যা প্রসারিত হয়েছে। কারলুকেভিচ বইটির শৈল্পিক উপস্থাপনা দিকে বিশেষ নজর দেন যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্ম । তিনি আরও বলেন,‘জয়নুল আবেদিন ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্ময়কর শিল্প-প্রতিভা। তাঁর আঁকা ১৯৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা এক অনন্য সৃষ্টি। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পচর্চার জনক। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের চিত্রকলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। মন্ত্রী শুধু কূটনৈতিক ও বাণিজ্য নয়, দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন বলেন, ‘বেলারুশ এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ডলার। এর উন্নয়নে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া বেলারুশের মাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইয়ের প্রকাশের মতো ঘটনা আমাদের মানুষকে আরও কাছাকাছি এনেছে।’

‘আমার সোনার বাংলা’ গ্রন্থে ছাপা হওয়া জয়নুলের ছবিগুলোর অনুকৃতি প্রদর্শন করা হয় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীত
‘আমার সোনার বাংলা’ গ্রন্থে ছাপা হওয়া জয়নুলের ছবিগুলোর অনুকৃতি প্রদর্শন করা হয় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বেলারুশের কবি, সাংবাদিক এবং রাইটার্স ইউনিয়নের সদস্য নৌম গালপেরিভিচ মন্তব্য করেন, ৫০ ভাষায় করা এই সংকলন চ্যালেঞ্জিং এবং একাগ্রতার বিষয়। নৌম গালপেরিভিচ বলেন, ‘আমি অনেকবার রেকর্ডিং শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণীতে প্রবেশ করতে, তাঁর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে আমার পক্ষে নিজের অনুবাদের মূল্যায়ন করা কঠিন। বেলারুশের জাতীয় ইতিহাস জাদুঘরের পরিচালক পাভেল সাপোকো চমৎকার গ্রাফিক ডিজাইন দিয়ে এটি একটি পূর্ণ প্রকাশনা মন্তব্য করে জানান, বইটিতে বাংলাদেশি শিল্পীদের মূল রচনাটি প্রদর্শন করা হয়েছে, যা ইলাস্ট্রেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ভারত, রাশিয়া, চীন, কাজাখস্তান, পোল্যান্ড, ইতালির কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজ ভাষায় ‘আমার সোনার বাংলা’ পাঠ করেন। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন বেলারুশে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রতিনিধি রাশেদ মুস্তফা। বইয়ের অলংকরণে ব্যবহার করা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা কিছু ছবি। বইয়ে রয়েছে তাঁকে নিয়ে প্রবন্ধ।