বৈরী আবহাওয়ায় বিপদে বোরো ধান

গরম বাতাসে ঝলসে গেছে খেতের এক লাখ টন ধান। মাসের শেষে হাওরে ঢলের আশঙ্কা।

বোরো ধানের খেত
প্রথম আলো ফাইল ছবি

গত বছরের এ সময়ে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। আর এ বছরের এখন খটখটে রোদ, দাবদাহের দাপট। অবশ্য এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীসহ ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। তবে তপ্ত বাতাসে ইতিমধ্যে দেশের ১২টি জেলায় প্রায় ১ লাখ টন ধানের চাল মাঠেই ঝলসে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কিছুদিন গরম আর ঝোড়ো বাতাস চলবে। মানুষ তো বটেই, ফসলের জন্যও এই আবহাওয়া বিপদ ডেকে আনছে।

এমন আবহাওয়া চলার পর মাসের শেষ দিকে আরেক বিপদের আশঙ্কা দেখছেন আবহাওয়াবিদ ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা। গত বছর হাওরে আগাম বন্যা হয়নি। কিন্তু এবার তা হওয়ার আশঙ্কা আছে। টানা খরতাপের কারণে নদ–নদী থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প আকাশে জমা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে মাসের শেষ দিকে একটি বড় মেঘমালা আসতে পারে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, চলতি মাসের শেষে দেশের উজানে ভারতীয় অংশে বৃষ্টিপাত দ্রুত বাড়বে। তীব্র বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট ঢল বাংলাদেশের হাওর এলাকায় হঠাৎ বন্যা হয়ে হাজির হতে পারে। ফলে চলতি মাসের মধ্যেই হাওর এলাকার সব ফসল কেটে ফেলতে হবে। নয়তো আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা আছে।

ফলে চলতি বছর দুই বিপদে পড়তে যাচ্ছে বোরো ধান। একদিকে খরতাপের কারণে ফসল ঝলসে যাওয়া, অন্যদিকে আগাম বন্যার আশঙ্কা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে গত রোববার বলা হয়, ২১ থেকে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের উজানে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তার আগে সেখানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে সেখান থেকে নদ-নদীগুলো দিয়ে বাংলাদেশের হাওর এলাকায় ঢল আসতে পারে।

এ ব্যাপারে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাওরের উজানে ভারতীয় অংশে এ সময় ভারী বৃষ্টি হয়। এবারও একই আশঙ্কা আছে। সেখানে ভারী বৃষ্টি হলে হাওরে ঢল আসতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হাওরে ১৮ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এক লাখ টন চালের পরিমাণ ধান কাটা হয়েছে। বর্তমান গতিতে ধান কাটা চললে সম্ভাব্য ঢলের আগে ১৫ লাখ টন ধান কাটা যাবে। সম্ভাব্য ঢলের আগে ধান কাটা শেষ করতে হলে গত বছরের মতো জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। হাওরে বাড়তি শ্রমিক পাঠিয়ে ও ধান কাটার যন্ত্র দিয়ে দ্রুত ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হবে।

২০১৭ সালে হাওরে আগাম বন্যায় প্রায় ১২ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছিল। ফলে সে বছর দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়। বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আনতে হয়। গত বছর একই রকম আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক উদ্যোগ ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর ফলে সেখানকার সব ধান আগে কেটে ফেলা সম্ভব হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত মে মাসের শুরুর দিকে হাওরের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। তবে গতবারের মতো এবারও আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা আচরণের কারণে হাওরের সব ধান এপ্রিলের মধ্যে কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ পরামর্শে বলা হয়েছে, গরম বাতাসের কারণে যে চিটা দেখা দিচ্ছে, তা থেকে ফসল রক্ষা করতে হলে জমিতে বেশি করে পানি ধরে রাখতে হবে। বাড়তি সেচ দিতে হবে। ধান পরিপক্ব হওয়ার আগপর্যন্ত জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণে পানি রাখতে হবে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে জমিতে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ও দস্তার সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এখন যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রাঙামাটিসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে। আবার কোথাও কোথাও তা প্রশমিতও হতে পারে। এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ এলাকার কোথাও না কোথাও কালবৈশাখীসহ ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।