দেশে এখন চর্মরোগের সফল ও আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে। ত্বকের জটিল রোগ ছাড়াও মুখের ক্ষত, ব্রণ, মেছতার দাগ, টাক মাথায় চুল গজানো, শ্বেতী রোগ, ভ্রু–ঠোঁটের সৌন্দর্যবর্ধন, আঁচিল, ট্যাটু দূর করার আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে দেশেই। দ্রুত রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা হলে সফলতা আসে বেশি। তবে এসব সময়সাপেক্ষ চিকিৎসা হওয়ায় রোগীদের ধৈর্য ধরা জরুরি। আজ মঙ্গলবার চর্ম ও যৌনরোগ বিষয়ে সোসাইটি অব ডার্মাটোলজিক সার্জনস অব বাংলাদেশ (এসডিএসবি) আয়োজিত নবম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সংস্থার ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা।
‘ডার্মাটোসার্জারি বিষয়ে ৯ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ শিরোনামে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সম্মেলনে দেশের তিনজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন অধ্যাপক এম মুজিবুল হক, এসডিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম ও অধ্যাপক এম ইউ কবির চৌধুরী।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে দেড় দশকে চর্মরোগের চিকিৎসার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। চর্মরোগের চিকিৎসা বলতে ত্বকের সাধারণ চিকিৎসাকেই বোঝে মানুষ। তবে এখন সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শ্বেতী রোগের চিকিৎসা হচ্ছে।
এ সময় শ্বেতী রোগের অস্ত্রোপচারের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন অরোরা স্কিন অ্যান্ড হেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে শ্বেতী রোগীদের বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দেশে নেই। তবে ভারতের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেশে শ্বেতী রোগীর সংখ্যা ৪৫ লাখের বেশি বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ রোগী অস্ত্রোপচারের উপযোগী। অস্ত্রোপচারের সফলতার হার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে এসব রোগের চিকিৎসায় সময় বেশি লাগে বলে চিকিৎসা শুরুর আগেই কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে চিকিৎসকদের। রোগীরা যেন ধৈর্য হারিয়ে না ফেলেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আতিকুল হক। তিনি বলেন, দেশে চর্মরোগের চিকিৎসায় দারুণ অগ্রগতি হয়েছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক। চিকিৎসাশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শাখা এখন চর্মরোগ। ডার্মোটোসার্জারিকে এখন মেডিকেলের পোস্টগ্র্যাজুয়েট পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা দরকার।
সম্মেলনে এসডিএসবির সভাপতি এস এম বখতিয়ার কামাল বলেন, এ সম্মেলন চিকিৎসকদের মধ্যে চর্মরোগ বিষয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা পদ্ধতি শেখার আগ্রহ তৈরি করবে। পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ ধারণা স্পষ্ট হবে যে একই চিকিৎসা এখন দেশের মধ্যে করা সম্ভব।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম বলেন, চর্মরোগের চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞান হালনাগাদ করা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, আয়েশা সিদ্দিকা, আনজিরুন নাহার আসমা এবং এসডিএসবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এ ওয়াহাব।
সম্মেলনে তিন ভারতীয় চিকিৎসক অংশ নেন। তাঁরা হলেন মানস চ্যাটার্জি, হারিস প্রসাদ ও নিতিন শেঠি। এ সময় তিন তরুণ চিকিৎসককে ফেলোশিপ প্রশিক্ষণ সম্মাননা দেওয়া হয়। এসডিএসবি ফেলোশিপ পান মুনিরা ফেরদৌস ও জয়ন্ত কুমার রায়। অধ্যাপক এম এ ওয়াহাব স্কলারশিপ পান তৈয়বা আক্তার।