ভবদহ ও কপোতাক্ষ অঞ্চলের অবৈধ ঘের অপসারণের দাবি

ভবদহ অঞ্চলের বিল কপালিয়ায় অবিলম্বে পরিকল্পিত জোয়ারাধার (টিআরএম) চালু ও খাল-বিল দখল করে তৈরি মাছের ঘের অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন গতকাল মঙ্গলবার যশোরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায়।
দুপুরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির যশোর জেলা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, নদী, খাল ও বিলের খাসজমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে ঘের তৈরি করে মাছের চাষ করছেন। এ কারণে বর্ষার সময় পানি বের হতে পারছে না। ফলে এবারও ভবদহ অঞ্চলের সাত উপজেলার অন্তত ৫৯০টি গ্রামের প্রায় সাত লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভবদহ অঞ্চলের বিল কপালিয়ায় অবিলম্বে টিআরএম চালু ও অবৈধ সব মাছের ঘের অপসারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি সরকার ঘেরসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য একটি দল ইতিমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। দলটি ঘুরে যাওয়ার পর থেকেই স্বার্থান্বেষী ঘের মালিকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের দাবি, ভবদহ ও কপোতাক্ষ অঞ্চলের অপরিকল্পিত ঘের অপসারণ ও ঘের করার পাঁয়তারা বন্ধ, বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে দ্রুত ঘেরসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের কেশবপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ভবদহ বিল ও কপোতাক্ষ নদ সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে কপোতাক্ষ নদ খনন করার সুফল নদের তীরবর্তী মানুষ ও কৃষকেরা ভোগ করতে শুরু করেছেন। এ বছর নদের দুই তীরের ঝিকরগাছা, কেশবপুর ও মনিরামপুর এলাকার জমিতে দু-তিনটি ফসলের আবাদ হয়েছে। ভবদহ এলাকার অনেক জমি চাষাবাদের যোগ্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় একটি পক্ষ ক্ষমতা ও পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে নদী ও খাল-বিলের খাসজমি দখল করে মাছের চাষ করতে উদ্যত হয়েছে। ইতিমধ্যে কেশবপুর উপজেলার পশ্চিম এলাকার বোয়ালিয়া বিলে ঘের করতে গেলে কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে সেই প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন। পাশের কেদারবিল ও সরসকাঠি বিলেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। অভয়নগর উপজেলার ঝিকরার বিলে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা সংগ্রাম করে আসছেন। এসব এলাকায় কৃষক ও ঘের মালিকেরা বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। এ কারণে যেকোনো সময় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস, সদস্য ও সিপিবি যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এলাহদাদ খান, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ, ঝিকরার বিলে ঘের ঠেকাও সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মো. লুৎফর গাজী, সদস্য গাজী নূরুল আমিন প্রমুখ।