ভারত থেকে কবে ফেরত আনা যাবে নিশ্চিত নয় কেউ

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেপ্তারের পর পি কে হালদার। গত শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার সল্টলেকে
ছবি: সংগৃহীত

পি কে হালদার নামে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে কবে নাগাদ তাঁকে দেশে ফেরত আনা যাবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় দুদক।

দুদকের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান গতকাল সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে যখন বিশ্বব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়, তখন সেটি ভারতেও যায়। পি কে হালদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইন্টারপোলের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দুদক। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কী জবাব দিয়েছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা রিপ্লাই (জবাব) পাইনি।’

অবশ্য ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুদকের সরাসরি যোগাযোগ না হলেও ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতীয় উইংয়ে যোগাযোগ করেছে বলে জানান সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, আসামিকে দ্রুত যাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারত থেকে পি কে হালদারকে দ্রুত ফেরত আনার সম্ভাবনা কার্যত নেই।

গত শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ১১টি বাড়ি, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে ইডি। তাঁর আরও সম্পদ পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন

এদিকে ভারতে পি কে হালদার গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য আদালতকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল এ তথ্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি মঙ্গলবার (আজ) আদালতের কার্যতালিকায় থাকবে।

গতকাল সকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। বিষয়টি উপস্থাপনের একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যে-ই হোক। আমরা এ ব্যাপারে সিরিয়াস।’

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে আনা প্রশ্নে দেড় বছর আগে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন। এ রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। রুলে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে আনতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা-ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না এবং এ ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

আরও পড়ুন

পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডসহ (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল), এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)—এই চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানেই তাঁর নিজের নামে কোনো শেয়ার ছিল না। এ চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ

গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থার মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ভারত থেকে কবে নাগাদ পি কে হালদারকে দেশে আনা যাবে, এটা আসলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। কী পরিমাণ মামলা সেখানে (ভারতে) হয়েছে, সে মামলাগুলোর বিচারে কত দিন লাগবে বা বিচারের আগে ফেরত আনা যাবে কি যাবে না, সুনির্দিষ্ট করে বলাটা সঠিক হবে না।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অফিশিয়ালি যোগাযোগ করেনি। তবে পি কে হালদার যে বাংলাদেশের সম্পদ ওই দেশে নিয়ে গেছেন এবং নাম পরিবর্তন করেছেন, এ বিষয়গুলো তাদের (ইডি) অফিশিয়াল প্রেস রিলিজে আছে।

আরও পড়ুন

পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের পাচার করা অর্থ ফেরতের বিষয়ে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনার পদ্ধতিটা খুব জটিল এবং এর খুব সাফল্য নেই—এটা সত্য। আমরা আশাবাদী যে আমরা যদি তাঁর (পি কে হালদার) কাছ থেকে তথ্য পাই, সেগুলো ফেরত আনতে সক্ষম হব।’

সাঈদ মাহবুব খান জানান, দুদক বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখবে। এ ছাড়া তাঁর সম্পদের বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ জানাবে। পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও অনুরোধ জানানো হবে, যাতে তারা সেখানকার আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুদককে দেয়।

এখনো তথ্য দেয়নি ভারত

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তারের তিন দিন পরও পি কে হালদার সম্পর্কে ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কোনো তথ্য জানায়নি। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানান।

আব্দুল মোমেন বলেন, প্রথমে ভারত সরকার জানাবে, এই লোক গ্রেপ্তার হয়েছে। হয়তো বলবে শাস্তির মেয়াদ বাংলাদেশে এসে কমপ্লিট করবে।

আরও পড়ুন

ভারতে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পি কে হালদারকে দেশে আনা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনুপ চেটিয়ার (উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা) ক্ষেত্রে প্রথমে বাংলাদেশে বিচার হয়েছে। তারপর ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও একই প্রসিডিউর (প্রক্রিয়া) হয়তো হবে। তারপরে হয়তো দেবে। তবে এটি আইন মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।