ভারত–সোভিয়েত চুক্তির পেছনে

মুক্তিযুদ্ধের সময়ই নানা দেশের কবিরা বাঙালির পক্ষে কলম ধরেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে বিদেশি গবেষকেরাও এ ঘটনার দিকে না তাকিয়ে পারেননি। প্রথমে ভারতের, পরে পশ্চিমা দেশগুলোর। মুক্তিযুদ্ধের নানা পর্ব নিয়ে তাঁদের বিবেচনা।

ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ও সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এ গ্রোমিকো। ৯ আগস্ট ১৯৭১ছবি: ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সৌজন্যে

১৯৭১ সালের জুলাই নাগাদ ভারতের আশা ছিল, তারা পূর্ব বাংলার সংকট ইস্যুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই দুই পরাশক্তিরই সমর্থন পাবে। নয়াদিল্লি সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আশা করেছিল। পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতিও চেয়েছিল। এপ্রিলে ইন্দিরা গান্ধী সোভিয়েত ইউনিয়নকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যূথবদ্ধ হয়ে ভারত ও পূর্ববঙ্গকে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।

মস্কো দ্রুততার সঙ্গে কূটনৈতিক সহায়তা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক হয়ে সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে বিনয়ের সঙ্গে নীরবতা দেখায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের নাক গলানো দেখে দ্রুততার সঙ্গে তৎকালীন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ১৯৭১ সালের জুনে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকাশ্য ও সর্বাত্মক সমর্থন পাওয়ার জন্য মস্কো সফর করেন।

ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে সামরিক সহায়তা দিতে ঢুকে পড়ার বিষয়ে এর আগে মে মাসের দিকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, তারা মধ্য নভেম্বরের আগে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ, ওই সময় প্রচণ্ড শীত পড়বে এবং ঠান্ডার কারণে ভারত ও চীন সীমান্তের চলাচল পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভারতে চীনের হানা দেওয়ার ঝুঁকি তখন কম থাকবে। একই সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দারা এটাও ধারণা করছিলেন, শীত পড়ার আগেই চীনের সহায়তা নিয়ে পাকিস্তান হামলা চালিয়ে বসতে পারে। শরণ সিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল, সে ধরনের কিছু হলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা পাওয়া যায়। তবে ভারত যেহেতু জোটনিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চায়, সে কারণে তিনি সহায়তার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা এ ধরনের কোনো লিখিত সমঝোতা করলেন না।

১৯৬৯ সালের গোড়াতেই সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট আলেক্সি কোসিগিন বুঝতে পেরেছিলেন, ভারত চীনের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখলেই মস্কোর সহায়তা চাইবে। তা সে চুক্তি করেই হোক আর না করেই হোক।

শরণ সিংয়ের মস্কো সফরের দিন সন্ধ্যাবেলায় সোভিয়েত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্শাল গ্রেকো মস্কোয় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ডি পি ধরকে একটি ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি করার প্রস্তাব দেন। সেখানে মার্শাল গ্রেকো তাঁকে বলেন, চীন ভালো করেই ভারতের সামরিক দুর্বলতার কথা জানে। এ কারণে যেকোনো সময় তারা হামলা চালাতে পারে। সে কারণে চীন অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘাত লাগলে যাতে রাশিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে পাশে পাওয়া যায়, সে জন্য দ্রুত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে ফেলা যেতে পারে। গ্রেকো দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে একরকম পীড়াপীড়ি শুরু করলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকোর সঙ্গে ৭ জুন সাক্ষাৎ করার সময় ইচ্ছে করেই আনুষ্ঠানিক চুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি গ্রোমিকোকে পূর্ব বাংলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানালেন এবং এটিও বললেন, চীনের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তান যা করছে, তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে যেকোনো সময় এখানে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে। এমনকি ইতিমধ্যেই চীনের মদদে পাকিস্তান যেসব উসকানিমূলক কাজ করেছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়া পাল্টা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। শরণ সিংয়ের এই কথায় গ্রোমিকো বললেন, ‘আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আমরা কিছুদিন আগেও এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আপনি কি মনে করেন আমরা এ বিষয়ে চুক্তি করতে পারব? চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে কি না, সেটিও নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন।’

শরণ সিং অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বীকার করলেন, চুক্তির বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হতে পারবে। কিন্তু চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এবং পূর্ববঙ্গ সংকট—এই দুই ইস্যুকে তিনি আলাদা করার চেষ্টা করলেন। তিনি গ্রোমিকোকে বললেন, আপাতত জরুরি বিষয় হলো পূর্ববঙ্গ। তিনি বললেন, ‘এ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করতে গেলে আমরা হয়তো অনেক দেরি করে ফেলব। তার চেয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে আমরা কি দ্রুততম সময়ে কিছু করতে পারি?’

গ্রোমিকো বললেন, ভারত যে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি আছে, এটা জেনে তিনি খুবই সন্তুষ্ট। শরণ সিং পরদিন কোসিগিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তাঁর কাছেও সোভিয়েতের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন, চীন পাকিস্তানের সমর্থনে নেমেছে। ভারত চায় সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে নিরপেক্ষ জায়গায় নিয়ে আসুক। কোসিগিন স্বীকার করলেন, এটি খুবই সম্ভব যে চীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংঘাতের আগুনে বাতাস দেবে। কিন্তু শরণ সিংয়ের সহায়তা প্রার্থনার বিষয়ে তিনি নীরব থাকলেন। কিন্তু শরণ সিং খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেওয়ার লোক নন। তিনি চীনের হুমকির বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত বললেন এবং এটিও বলে রাখলেন, চীন যদি আক্রমণ করে, তাহলে ভারত তার পাল্টা জবাব দিতে স্থির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি কোসিগিনকে বললেন, ‘আমরা আপনাদের সহায়তা ও সহানুভূতি পাব, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

অবশেষে কোসিগিন কিছু আশ্বাস দিলেন। তিনি বললেন, ‘বন্ধু হিসেবে অবশ্যই আপনারা আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন।’ তিনি নিতান্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করলেন না।

শরণ সিংয়ের মস্কো সফর এবং দুই রুশ নেতার সঙ্গে আলাপের মধ্য থেকে বোঝা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে চীনের আগ্রাসন থেকে রক্ষার বিষয়ে সাহায্য করতে রাজি থাকলেও তা তারা আনুষ্ঠানিক চুক্তির আওতায় করতে চাইছিল। কিন্তু ভারত সে ধরনের চুক্তির ভেতরে না গিয়ে মৌখিক আলোচনা অথবা গোপন চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে সহায়তা পেতে চাইছিল।

তবে পরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউল সবদিকে বিবেচনা করে মত দিলেন, আনুষ্ঠানিক চুক্তি করাই ভালো হবে। শুধু মৌখিক বোঝাপড়া দিয়ে এত বড় ইস্যু সামাল দেওয়া যাবে না। চীন তখন যেভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠছিল, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে শুধু গোপন চিঠি চালাচালি দিয়েও কাজ হবে না। এ কারণে সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা ইস্যু ধরে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে যাওয়াই ভারতের জন্য ভালো হবে। তিনি চীনের সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি করার প্রস্তাব করেন। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আগেই একটি চুক্তির আলোচনা চলছিল। পরে সে আলোচনা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ইইউএআইর-ইউএসএসআর ট্রিটি অব পিস অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ শীর্ষক আগের চুক্তির খসড়ায় কাউল কিছু সংশোধনী এনে ভারতীয় পক্ষের খসড়া তৈরি করেন।

এরপর ১৯৭১ সালের জুন নাগাদ শরণ সিং নিতান্ত অনিচ্ছায় দেড় বছর আগে স্থগিত হয়ে হিমঘরে পড়ে থাকা আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সম্মত হন। কর্মকর্তারা খসড়া বিশ্লেষণ করে তাতে উল্লিখিত কয়েকটি ইস্যুতে থাকা ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার মতপার্থক্য কমিয়ে আনেন। চীন যখন উসকানি দিয়ে যেকোনো সময় হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানকে প্রস্তুত করছিল, ঠিক এমন সময়েও শেষ পর্যায়ে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধী এই চুক্তিতে তাঁর অনুমোদন স্থগিত করে রাখলেন। পিতা জওহরলাল নেহরু যেভাবে দাপ্তরিক ফাইলপত্রে সবকিছুর উল্লেখ করে নিজস্ব চিন্তাকে প্রকাশ করে দিতেন, ইন্দিরা সে রকম ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে তখনো তিনি জোটনিরপেক্ষ থাকতে চাইছিলেন। কারণ, তিনি বুঝতে পারছিলেন, সোভিয়েতের সঙ্গে এই চুক্তি হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নষ্ট হবে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা তখনো এই সংকটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহযোগিতা পাওয়ার আশা করে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু ১৫ জুলাই নাগাদ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেল। ওই দিন নাটকীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘোষণা এল, কিসিঞ্জার পাকিস্তান হয়ে বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরের পরিকল্পনা আছে। তার মানে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। এর পরদিনই দিল্লিতে নিযুক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব কাউলের সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাঁকে বললেন, ভারতের বিরুদ্ধে চীনা, পাকিস্তানি কিংবা আমেরিকান পদক্ষেপ রুখে দিতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত করে ফেলা দরকার।

কাউলের সময়ক্ষেপণের কোনো অবস্থা ছিল না। ১৭ জুলাই তিনি চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য সুপারিশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি নোট পাঠান। সেখানে তিনি লেখেন:

পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র সরবরাহ করে যাওয়া; কিসিঞ্জারের পাকিস্তান হয়ে পিকিংয়ে গোপন সফরে যাওয়া; যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়া; জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা জোরালো হওয়া; ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ জোট বাঁধা এবং আলজেরিয়া, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে আগামী আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বরেই আমাদের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়াতে উসকানি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৫ আগস্টের আগেই আমাদের খসড়া ও নথিপত্র চূড়ান্ত করে ফেলা দরকার।

এরপরই এল যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত লক্ষ্মীকান্ত ঝার টেলিগ্রাম। সেখানে তিনি জানালেন, কিসিঞ্জার তাঁকে বলেছেন, ইন্দো-পাকিস্তান সংঘাত এবং সে বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপজনিত যেকোনো জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সহায়তা করতে পারবে না। ঝার টেলিগ্রামের উল্লেখ করে কাউল অপর একটি নোটে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার সব ধরনের সম্ভাব্যতা তৈরি হয়েছে। পিকিং থেকে ফেরার পর ড. কিসিঞ্জার তাঁকে জানিয়েছেন, আমেরিকা ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতে হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি চীনও যদি সেখানে সংঘাতে জড়ায়, তাহলেও যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নাক গলাবে না। এই বাস্তবতা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার দিকে আমাদের নিয়ে গেছে। যদি চীন-আমেরিকা সম্পর্ক সফল হয়, তাহলে আমাদের নির্ভরযোগ্য কোনো বন্ধুর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমরা যদি আমাদের নীতিতে অটল থেকে কোনো বন্ধুর সহায়তা না নিই, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে নির্বান্ধব হয়ে পড়ব। আর সোভিয়েতের সঙ্গে এই চুক্তি করলে যে আমরা জোটনিরপেক্ষতার চরিত্র হারাব, তা–ও নয়। কারণ, জোটনিরপেক্ষতার মানে এই নয়, কোনো দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ার পরও তাকে কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে হুমকি সহ্য করে যেতে হবে।’

এরপরই ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশনামতে, ভারতের পক্ষ থেকে তৈরি করা চুক্তির খসড়া চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করা হলো। মস্কোয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ডি পি ধরের স্থলে তখন কে এস শেলভেঙ্কর দায়িত্ব নিয়েছেন। ২ আগস্ট শেলভেঙ্করের হাতে ওই খসড়া হস্তান্তর করা হয়। ডি পি ধর তখন ভারতের বাংলাদেশ নীতির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ৩ আগস্ট মস্কোয় যান। এর পরদিনই তাঁর আর গ্রোমিকোর বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যায়। ভারতের দিক থেকে খসড়া চূড়ান্ত করার পর সোভিয়েতের কাছে তা দেওয়ার পরপরই সোভিয়েতের কর্মকর্তারা তা পর্যালোচনা করেন। ইতিপূর্বে কিছু বিষয়ে সোভিয়েতের আপত্তি ছিল। কিন্তু এবার তারা সেই আপত্তির জায়গা থেকে সরে আসে এবং তা অনুমোদন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রোমিকো ৮ আগস্ট দিল্লি উড়ে আসেন এবং এর পরদিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। (সংক্ষেপিত)

সূত্র: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার, চন্দ্রশেখর দাশগুপ্ত, জাগেরনট বুকস, ২০২১

*চন্দ্রশেখর দাশগুপ্ত অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কূটনীতিবিদ। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।