ভোট দেখতে গিয়ে লাশ, খোঁজ নেননি কেউ

কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে ভোটের আগের দিন শনিবার দিবাগত রাতে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ শাখাওয়াত হোসেন (১৮) মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টায় আড্ডা ডিগ্রি কলেজের মাঠে তাঁর জানাজা হয়েছে। গত সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে ভোটের দিন রোববার গুলিবিদ্ধ হয়ে ইসরাইল মিয়ার (১৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত সোমবার তাঁর বাবা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহির মিয়াসহ ৩৫ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ শ জনকে আসামি করেছেন।

শাখাওয়াত বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। গতকাল তাঁর জানাজায় বিএনপির প্রার্থী জাকারিয়া তাহের অংশ নেন। পরে তিনি শাখাওয়াতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।

ইসরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাজঘর দক্ষিণ এলাকার ছায়েদ মিয়ার ছেলে। সে বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। সে মুদি দোকানে কাজ করত। ছায়েদ রাজমিস্ত্রি। ঘটনার তিন দিন পার হলেও পুলিশ, প্রশাসন বা রাজনীতিবিদদের কেউ তাঁদের বাড়িতে যাননি।

বরুড়ার বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আড্ডা ডিগ্রি কলেজের ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ গুলি করে। এতে বিএনপির চারজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা হলেন নুরুজ্জামান, শাখাওয়াত হোসেন, দিদারুল আলম ও নাহিদ হোসেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাখাওয়াত মারা যান।

শাখাওয়াতের বাবা আবু তাহের বলেন, কলেজে কে বা কারা আগুন দিয়েছে—এ খবর পেয়ে শাখাওয়াত অন্য অনেকের সঙ্গে সেখানে যান। এরপর গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।

জানতে চাইলে বরুড়া থানার ওসি আজম মাহমুদ গতকাল বলেন, ওই ঘটনায় রোববার কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তরুণ কুমার আচার্য এক থেকে দেড় শ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে যান। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে চারদিক থেকে ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা ও গুলি করে। এ সময় কেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ গজ উত্তরে থাকা ইসরাইল গুলিবিদ্ধ হয়। একই এলাকার বাছির মিয়া, ছানা উল্লাহ ও জাবেদ মিয়াও গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে ইসরাইল মারা যায়।

ইসরাইলের মা সামিরুন বেগম গতকাল বলেন, ‘আমার ছেলের এখনো ভোটের বয়সই হয়নি। সকালে ভাত খাইয়্যা ভোট দেখতে গিয়া লাশ হইল পুলাডা। এখনো কেউ খোঁজ পর্যন্ত নিতে আইল না।’