ভোটে জয়ী হিমসাগর,পছন্দের আম চাঁপাই–রাজশাহীর

হিমসাগর আমই সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় আম হিমসাগর। আদতে আমটির নাম ক্ষীরশাপাতি। এ নামেই ২০১৯ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় আমটি।

প্রথম আলো অনলাইনে আয়োজিত এক জরিপে হিমসাগরই সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা আরও জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার আম তাদের বেশি পছন্দের।  

২ হাজার ১৬৬ জন মানুষ জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথম আলো অনলাইনে সুপারশপ স্বপ্ন নিবেদিত সাত দিনের আম উৎসবের মধ্যে একটি আয়োজন ছিল এই অনলাইন জরিপ। এতে জনপ্রিয়তায় আম্রপালি হিমসাগরের সঙ্গে লড়াই করলেও তাকে হাড্ডাহড্ডি লড়াই বলা যাবে না। পাঠকের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় আম্রপালি এখন দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত আম।

জরিপে পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আম্রপালি
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আম উৎসবের জরিপে হিমসাগর ৭৫৩ ভোট পায়, যা মোট ভোটের প্রায় ৩৫ শতাংশ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আম্রপালি পায় ৫৭৭ ভোট (২৭ শতাংশ)। ভোটে তৃতীয় হয়েছে ল্যাংড়া, এ আমটি পেয়েছে ৩৭৮ ভোট। মোট ভোটের সাড়ে ১৭ শতাংশ।

রংপুরের ব্র্যান্ড হাঁড়িভাঙাও অনেকের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। ২৬৩ জন ভোট দিয়েছেন এই আমকে, যা মোট ভোটের ১২ শতাংশের কিছু বেশি। ফজলি পেয়েছে ১২৬ ভোট। আর জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ জন ভোটদাতা বলেছেন, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া বা ফজলি নয়, তাঁদের পছন্দ অন্য আম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী জয়ী

জরিপের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, কোন অঞ্চলের আম আপনার বেশি পছন্দ। এ ক্ষেত্রে ভোটাভুটি ছিল একেবারেই প্রাণহীন। একতরফাভাবে জয়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা। জরিপে ছয়টি বিকল্প উত্তরের মধ্যে এই দুই জেলাকে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল। তারা পেয়েছে ১ হাজার ৫২৫ ভোট, যা মোট ভোটের ৭০ শতাংশের বেশি।

রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের পরিচিতি রয়েছে আম বেচাকেনার জন্য
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশের অনেক জেলায় আম ভালো হয়। বাণিজ্যিক আবাদ বাড়ছে। জরিপে সবার নাম দেওয়া সম্ভব হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীর সঙ্গে সাতক্ষীরা, নওগাঁ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মেহেরপুরের পাশাপাশি একটি বিকল্প উত্তর ছিল ‘অন্যান্য জেলা’। এই ‘অন্যান্য’তে ভোট দিয়েছেন ২৪৬ জন পাঠক, যা মোট ভোটের ১১ শতাংশের বেশি। তাই দ্বিতীয় হয়েছে অন্যান্য জেলা। ১৫৭ ভোট পেয়ে সাতক্ষীরা তৃতীয়, ৯৬ ভোট পেয়ে নওগাঁ চতুর্থ, ৮৭ ভোট পেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পঞ্চম এবং ৫৫ ভোট পেয়ে মেহেরপুর ষষ্ঠ হয়েছে।

আম কীভাবে খেতে পছন্দ

জরিপে প্রশ্ন ছিল—আপনি কীভাবে আম খেতে পছন্দ করেন? টুকরা করে, ছিলে কামড়িয়ে, চুষে, আম-দুধ, জুস করে ও আমভাত। ভোট বেশি পড়েছে টুকরাতে—১ হাজার ৮৫টি, যা মোট ভোটের ৫০ শতাংশ। ছিলে কামড়িয়ে যে অনেক মানুষ আম খেতে পছন্দ করে, তা-ও উঠে এল জরিপে। ৬৫০ জন ভোটদাতা বলেছেন, তাঁরা ছিলে কামড়িয়ে আম খেতে ভালোবাসেন, যা মোট ভোটের ৩০ শতাংশ। ২০০ ভোটদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা চুষে আম খেতে পছন্দ করেন (৯ শতাংশ)। আম-দুধ খেতে পছন্দ করেন ১৭১ জন (৮ শতাংশ)। জুসের পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৫টি এবং আম-ভাতে ২৫টি।

আমের আচারও অনেকের পছন্দ
ছবি: ফেসবুক গ্রুপ ‘নুনেতে ভাতেতে’

আমের আচার এগিয়ে

আমের তৈরি নানা পদের মধ্যেও ভোটাভুটি হয়েছে। জয়ী আমের আচার। এ পদটি পেয়েছে ৯৩২ ভোট (৪৩ শতাংশ)। এরপর রয়েছে আমসত্ত্ব, মোট ভোট ৫৫৮টি (২৬ শতাংশ)। আমের প্রক্রিয়াজাত জুস পেয়েছে ৫০১ ভোট (২৩ শতাংশ)। আমের মোরব্বা পেয়েছে ১৭৫ ভোট (৮ শতাংশ)।

এত আম খাবে মানুষ!

জরিপে শেষ প্রশ্ন ছিল, আপনি এ মৌসুমে কত কেজি আম খাবেন বলে আশা করেন? ৫, ১০ বা ১৫ কেজি নয়, মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে ‘২০ কেজির বেশি’ উত্তরে। ১ হাজার ৩৯২ জন ভোটদাতা বলেছেন, তাঁরা এ মৌসুমে ২০ কেজির বেশি আম খাবেন; যা মোট ভোটের ৬৪ শতাংশের বেশি।

রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসা শুরু হয়েছে, এই আমও পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এরপর বেশি ভোট পড়েছে ১০ কেজিতে। জরিপে অংশ নেওয়া ২ হাজার ১৬৬ জনের মধ্যে ৩১৬ জন (১৫ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা এ মৌসুমে ১০ কেজি আম খাওয়ার আশা রাখেন। ১৫ কেজিতে ভোট পড়েছে ২৩৭টি (১১ শতাংশ)। ৫ কেজি পেয়েছে ২২১ ভোট, যা মোট ভোটের ১০ শতাংশের মতো।

আমের মৌসুমের এখন মাঝামাঝি। এবার দাম তুলনামূলক কম। বাজারে উঠতে শুরু করেছে হাঁড়িভাঙা। আম্রপালির এখন ভরা মৌসুম। ফজলিও আসছে। আর সব শেষে আসবে আশ্বিনা জাতের আম।