ভ্রমণকন্যা এলিজা

এলিজা বিনতে এলাহী

ঐতিহ্যের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে বেড়ান এলিজা বিনতে এলাহী। নিজেকে পরিচয় দেন ‘ঐতিহ্য পর্যটক’ হিসেবে। এলিজার ভ্রমণের বিশেষত্ব হলো, তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখেন। সংগ্রহ করেন সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তথ্য–উপাত্ত। এককথায় যাকে বলে—হেরিটেজ ট্যুরিজম বা ঐতিহ্য পর্যটন।

‘কোয়েস্ট­: আ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের ৬৪ জেলা। ২০১৬ সালের ১৭ মে থেকে শুরু করে গেল বছরের ২৮ আগস্ট শেষ করেছেন প্রথম পর্বের ভ্রমণ। এরপর দুই মাসের বিরতি। তারপর আবার ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকা জেলা থেকে শুরু করেছেন একই প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্বের ভ্রমণ।

সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচেই তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়ান। বর্তমানে উত্তরের জেলা দিনাজপুর ভ্রমণ করছেন। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবেন দিনাজপুরে। দ্বিতীয় পর্বের পরিকল্পনা জানিয়ে এলিজা বলেন, ‘এবারও দেশের সব জেলা ঘুরব। এর আগে তো জনপ্রিয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো ভ্রমণ করেছি। এবার এমন স্থানগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যেগুলো সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা কম।’

ঐতিহ্যবাহী কোনো স্থানে ভ্রমণে গেলে সেখানকার ইতিহাস, তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি ছবি ও ভিডিও করে রাখেন এলিজা। এসব ভিডিও ও ছবির সমন্বয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থান ও ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তথ্যচিত্রও বানিয়েছেন তিনি।

নতুন কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে পড়ে নেন ওই অঞ্চল সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখকের বই। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখার পাশাপাশি মিশে যান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। সারা দিন ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় তরুণদের জন্য সময় বরাদ্দ রাখেন। স্থানভেদে প্রথম আলো বন্ধুসভা, স্কাউট, ফটোগ্রাফি সোসাইটিসহ জেলার বিভিন্ন সংগঠনের তরুণ সদস্যদের সঙ্গে মেতে ওঠেন। কথা বলেন নিজ অঞ্চলের ইতিহাস আর ঐতিহ্য পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে।

এলিজার এই ঐতিহ্য সন্ধানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো, তরুণদের ঐতিহ্য পর্যটনে আকৃষ্ট করে তোলা। তাঁর মতে, তরুণদের যদি পর্যটনে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে সামগ্রিকভাবে দেশের পর্যটনশিল্পের উন্নতি হবে।

প্রায় ২০ বছর ধরে ভ্রমণ করছেন এলিজা। দেশের মানচিত্র ছাড়িয়ে ৪৯টি দেশে ভ্রমণ করেছেন এই এলিজা। অপেক্ষায় রয়েছেন দেশ ভ্রমণের হাফ সেঞ্চুরির। এক পুত্র আর স্বামী নিয়ে ঢাকায় বাস তাঁর। ভ্রমণ আর সংসার সামাল দিয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন তিনি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরলেও সব সময়ই তাঁর ভাবনায় থাকে বাংলাদেশের পর্যটন। দেশের পর্যটনের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণাও করেছেন তিনি। এ–বিষয়ক তাঁর দুটি গবেষণাপত্রও রয়েছে। গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘পর্যটনশিল্পে আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমি দেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম বা ঐতিহ্যগত পর্যটনকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’