ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটি এখন গ্যারেজে

উদ্বোধনের পর থেকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বাস দুটি এভাবেই পড়ে আছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি গ্যারেজে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাস দুটির দাম ৩ কোটি টাকা। কথা ছিল, বাসে দুটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাতে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক বই ও অন্যান্য স্মারক। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই চলবে এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্বোধনের পর বাস দুটির স্থান হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি গ্যারেজে। বাস দুটি কোথাও যায়নি, কেউ পড়েনি মুক্তিযুদ্ধের বই, দেখেনি স্মারক।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের স্থান যেমন গ্যারেজে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিও স্থবির। প্রকল্পের নাম ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধকরণ’। প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প ২০১৭ সালে নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে আগামী বছর জুন পর্যন্ত, মেয়াদ মোট পাঁচ বছর।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত ফেব্রুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পটির অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। এই প্রকল্পের দুই অংশ। একটি হলো ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা, অন্যটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি পালন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্প নেওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের জন্য দুটি বাস কেনা হয়। তবে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর কবে থেকে সারা দেশে চলবে, কোথায় কোথায় যাবে—এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শিগগিরই বাসগুলো ঢাকার বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। আর প্রকল্পও যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের বাস যেখানে পড়ে আছে, সেই গ্যারেজে গিয়ে গত বুধবার জানা যায়, জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের। এই প্রতিবেদকের যাওয়ার কথা জানার পর মঙ্গলবার বাস দুটো ধোয়ামোছা করা হয়। একটি বাসের চালক শুক্কুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একবার আমরা হাতিরঝিলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি সেখানে দাঁড়াতেই দেয়নি।’ তিনি বলেন, বাস কোথাও না যাওয়ায় তাঁরা তেজগাঁওয়ের এই গ্যারেজেই থাকেন।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের স্থান যেমন গ্যারেজে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিও স্থবির। প্রকল্পের নাম ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধকরণ’। প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প ২০১৭ সালে নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে আগামী বছর জুন পর্যন্ত, মেয়াদ মোট পাঁচ বছর।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর গ্যারেজে পড়ে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দুটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর সারা দেশ ঘুরছে। জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্চ মাসকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।’

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্পের আওতায় তিনটি জেলায় কিছু স্কুলে কর্মসূচি পালিত হয়। প্রকল্পটির পরিচালক মু. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বেশির ভাগ স্কুলে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে কোন কোন স্কুলে অনুষ্ঠান হয়েছে, তার তালিকা চাইলেও ব্যস্ততার কথা বলে দেননি। একই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও তালিকা পাওয়া যায়নি।

এ প্রকল্পের মতো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বধ্যভূমি সংরক্ষণ, ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ধীর। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির উৎসবের মাসে উদ্বোধন করা বাসগুলো অলস পড়ে আছে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি সৃজনশীল কাজ। কাজটি করতে অনেক মমতা লাগে, যত্ন লাগে।