মওদুদ আহমদ আর নেই

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ
ফাইল ছবি

চলে গেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে মওদুদ আহমদকে চিকিৎ​সার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।

এর আগে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দুই দফায় মওদুদ আহমদকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান তাঁর ফুসফুসে পানি জমে যায়। পরে এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে তাঁকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে আছেন স্ত্রী হাসনা মওদুদ আহমদ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, মওদুদ আহমদের চলে যাওয়া শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, তিনি একজন খ্যাতনামা আইনজীবী এবং উঁচু মানের লেখক ছিলেন। মওদুদ আহমদ বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁর (মওদুদ আহমদ) এই চলে যাওয়ায় আমরা শোকাহত। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

মওদুদ আহমদ দেশের এক বর্ণাঢ্য রাজনীতিক। তিনি আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। এরশাদ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তবে এর আগে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার সঙ্গে মতদ্বৈততায় সরকার থেকে ছিটকে পড়েন। আশির দশকে এরশাদের সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়া ছিল দারুণ রাজনৈতিক চমক।

১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করার পর বিশেষ সামরিক আদালতে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিক। ১৯৮৫ সালে সেই দণ্ড মাথায় নিয়েই এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতি হন মওদুদ আহমদ। এরশাদের পতনের পর ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। এর পরপরই ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা’র মতোই বিএনপিতে ফিরে আসেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মওদুদ আহমদ ধানের শীষ ও লাঙ্গল—দুই প্রতীকেই নির্বাচন করেছেন।

পাঁচবার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ। মওদুদ আহমদকে গত ৩০ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, ৮ থেকে ১০ দিন ধরে তিনি অসুস্থতা বোধ করছিলেন। তবে বাসায় চিকিৎসা চলছিল। একপর্যায়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে ও রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে সিসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন।