মঞ্জুর হত্যা মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ এরশাদ

এইচ এম এরশাদ ও এম এ মঞ্জুর

মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর হত্যা মামলার আসামির তালিকা থেকে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে বাদ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাঁদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার এ আদেশ দেওয়া হয়।

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনা আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনাকারী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আবুল কাসেম প্রথম আলোকে এটি নিশ্চিত করে বলেছেন, এম এ মঞ্জুর হত্যা মামলায় সম্প্রতি সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখানে এইচ এম এরশাদ ও মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। কারণ, তাঁরা মারা গেছেন। এ ছাড়া তিনজনকে আসামির তালিকায় রাখা হয়। আদালত সম্পূরক অভিযোগপত্রটি নথিভুক্ত করেছেন। আগামী ৬ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই মারা যান। গত বছর মারা যান ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান আবদুল লতিফ। এখন তিন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি থাকলেন মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন।

মামলার নথিপত্র সূত্রে ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিপি আসাদুজ্জামান খান অধিকতর তদন্ত চেয়ে আবেদনটি করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ‘মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, তদন্তে ত্রুটি রয়েছে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এখন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে অসম্পূর্ণতা থাকায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে ঘটনার অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

মামলায় এরশাদসহ পাঁচজনের বিচার চলছিল। এরশাদ ছিলেন অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এরশাদের নির্দেশে কিছু সামরিক কর্মকর্তা মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে পুলিশ আটক করে তাঁকে। একই বছরের ২ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হাটহাজারী থানার পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তাতে অভিযোগ করা হয়, মঞ্জুরকে পুলিশের কাছ থেকে মেজর কাজী এমদাদুল হক সেনা হেফাজতে নেন। পরে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে।

১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এরশাদের নির্দেশে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মঞ্জুরকে হত্যা করেন এবং লাশ গোপন করার চেষ্টা করেন।