মহামারি–দুর্যোগে মানুষের পাশে

সিলেট অঞ্চলে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের
ছবি: সংগৃহীত

এবারের বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে খাবার এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। কালক্ষেপণ না করে ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। শুধু এই দুই জেলা নয়, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, বগুড়া, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইলের বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ফাউন্ডেশন।

কেবল বন্যার সময় নয়, বছরজুড়ে স্বাস্থ্যসেবাসহ নানাভাবে অসহায় মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুই বন্ধুকে রেস্তোরাঁয় রেখে আসতে অস্বীকৃতি জানানোয় জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন ফারাজ আইয়াজ হোসেন।

সাহসী এই তরুণের নামে ‘ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলেছে তাঁর পরিবার। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। ফারাজ বন্ধুত্ব, সাহসিকতা ও মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন, সেই অনুভূতিকে ধারণ ও লালন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এই ফাউন্ডেশন।

বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ

এবারের বন্যায় সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ায় ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, দেশলাই, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। দেশের বন্যাদুর্গত অন্যান্য এলাকায়ও ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।

বছরজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা

‘মানবতার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা’ স্লোগান নিয়ে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসাশিবিরের আয়োজন করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হয়। চিকিৎসাশিবিরে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম আমজাদ হোসেন, জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন অধ্যাপক এম খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ।

চলতি বছর দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এ সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় সহায়তা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পাশে দাঁড়ায় ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন।

সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনকেন্দ্র সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডে (সিআরপি) চালু আছে ‘ফারাজ হোসেন সেন্টার’। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের থেরাপি ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে এই কেন্দ্র ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে চক্ষুসেবা সুবিধা নিয়ে হাজির হচ্ছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। এ জন্য ডিস্ট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনালের (ডিসিআই) সঙ্গে কয়েক বছর ধরে নিয়মিত চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে।

করোনাকালে অক্সিজেন যন্ত্র সরবরাহ

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। দেশের অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। এ সময় জটিল করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সরবরাহ করেছে ফাউন্ডেশন।

এ ছাড়া করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অনলাইন আলোচনার আয়োজন করে ফাউন্ডেশন। ‘সচেতনতায় শক্তি, সাহসিকতায় জয়’ স্লোগানে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরীর মতো ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতিভা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। তাদের নিয়ে নিয়মিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।

ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল বিনয় দাস প্রথম আলোকে বলেন, সাহসিকতা, বন্ধুত্ব আর মানবিকতার প্রতি ফারাজের মূল্যবোধ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে ফাউন্ডেশন। যেখানেই অসহায় ও বঞ্চিত মানুষ, সেখানেই কাজ করবে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের কথা বিবেচনায় না নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে তারা।