মা ও বোনের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত ক্যাপ্টেন নওশাদ

ক্যাপ্টেন নওশাদকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

মা ও বোনের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুমকে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এ সময় তাঁর স্বজনেরা, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেলা দুইটার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বলাকা ভবনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁর কর্মস্থলের সহকর্মীরাসহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

বেলা তিনটার দিকে পাইলট নওশাদকে বহনকারী একটি ফ্রিজিং ভ্যান বনানী কবরস্থানে এসে পৌঁছায়। পাইলট নওশাদকে দাফনের আগে সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে দাফন করা হয়।
পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের মরদেহ আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ভারত থেকে দেশে আনা হয়। তাঁকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিমান জানিয়েছে, বিমানের দোহাগামী বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ময়ূরপঙ্খি উড়োজাহাজ দেশে ফেরার পথে ভারতের নাগপুরে থামে। সেখান থেকে ফ্লাইটটি ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ নিয়ে দেশে আসে। উড়োজাহাজটি অবতরণের আগেই নওশাদের সহকর্মীরা বিমানবন্দরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

বিমান অবতরণের পর সহকর্মীরা তাঁর কফিনটি কাঁধে করে নামান। পরে একটি মঞ্চে সেটি রাখা হয়। সেখানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমানের এমডি ও সিইও আবু সালেহ মোস্তফা কামাল শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ অন্যদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিমানবন্দরের শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে পাইলট নওশাদকে উত্তরার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে পাইলট নওশাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহকর্মীরা তাঁকে একপলক দেখতে পান। তাঁর মরদেহ গোসল শেষে জানাজার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

নওশাদের ছোটবেলার বন্ধু নাট্যনির্মাতা অমিতাভ রেজা। তিনিও ছুটে এসেছেন বন্ধুকে শেষবারের মতো দেখতে। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্কুলে ও সবার টিফিন চেক করত, কার টিফিনে কী আছে, ও চেক করত। ও ফুটবল খেলত, গোলকিপার ছিল। ছোটবেলায় কাগজের বিমান বানিয়ে হাতে নিয়ে ঘুরত। বড় হয়ে ও প্যাশনেট ক্যাপ্টেন হয়েছে।’

নওশাদের ছোটবেলার আরেক বন্ধু খন্দকার মোহাম্মদ জিয়া। তিনি বলেন, ‘বন্ধু হিসেবে যখনই যাকে বিপদগ্রস্থ দেখেছে, তার পাশে এগিয়ে এসেছে নওশাদ। খুবই মিষ্টিভাষী, অসাধারণ চিন্তাভাবনার মানুষ ছিল।’

এর আগে বেলা সোয়া একটার দিকে পাইলট নওশাদকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সদর দপ্তর বলাকা ভবনে নেওয়া হয়। এখানে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান বলাকা ভবন মসজিদের ইমাম আবদুল্লাহিল কাইয়ুম। জানাজা শেষে পাইলট নওশাদকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ভারতীয় হাইকমিশন, বিমানশ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
ভারতের নাগপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার দিকে নওশাদের মৃত্যু হয়। নওশাদ সবশেষ নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত শুক্রবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে ওমানের মাসকট থেকে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন নওশাদ। ভারতের আকাশসীমায় থাকা অবস্থায় ৪৪ বছর বয়সী এই পাইলট হৃদ্‌রোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হন। এ সময় বিমানটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ক্যাপ্টেন নওশাদ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বিমানের আরেকটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করিয়ে ১৪৯ জন যাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন।