মা-বাবা-ভাইকে রেখে চলে গেল ছোট্ট ছোঁয়া

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ছোট্ট ছোঁয়া মণি মা-বাবার শেষ আদরও পায়নি।  ছবি: সংগৃহীত
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ছোট্ট ছোঁয়া মণি মা-বাবার শেষ আদরও পায়নি। ছবি: সংগৃহীত

চার বছরের ছোট্ট আদিবা আক্তার ছোঁয়া! মা-বাবার সঙ্গে ট্রেনে চেপেছিল। সেটাই হলো তার শেষ যাত্রা। মা-বাবা শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখতে পারলেন না বুকের ধনকে। কারণ, তাঁরা নিজেরাই গুরুতর আহত। একদিকে নিজেদের শরীরজুড়ে আঘাতের যন্ত্রণা, আরেক দিকে কন্যার মৃত্যুশোকে একেবারেই ভেঙে পড়েছেন এই দম্পতি। সোহেল মিয়া (৩৫) ও নাজমা বেগম (৩০) দুজনের বাড়িই হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায়। চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন এই দম্পতি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ছুটিতে মা-বাবার সঙ্গে বানিয়াচংয়ে দাদা ও নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ছোঁয়া। ছুটি শেষে গত সোমবার সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপেছিলেন সোহেল, নাজমা, তাঁদের ছেলে মো. নাফিজ (৬) ও নাজমার মা রেনু বেগম (৫৫)। সোমবার দিবাগত শেষ রাতের দিকে কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটির সংঘর্ষ হয়। এতে শিশু ছোঁয়াসহ ১৬ জন নিহত হন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে আসেন ছোঁয়ার মামা জামাল মিয়া। পরে ভাগনির লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। গতকাল বেলা তিনটার দিকে জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছোঁয়ার লাশ তার মামার জিম্মায় দেন।

জামাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছুটি শেষে মা-বাবা, ভাই ও নানির সঙ্গে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় ছোঁয়া। দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা ট্রেনের নিচেই পড়ে ছিল মেয়েটি। পরিবারের খুদে সদস্যকে হারানোর খবরটি সন্ধ্যা পর্যন্ত জানতেন না তার মা-বাবা। পরে স্বজনদের মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জামাল মিয়া জানান, দুর্ঘটনায় নাজমার একটি হাত ও একটি পা ভেঙে গেছে। সোহেলের ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশের হাড় গুঁড়া হয়ে গেছে। আর কোমরের ওপর থেকে মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। সোহেল ও নাজমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। আর ছোঁয়ার নানির দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নাফিজ সামান্য ব্যথা পাওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জামাল মিয়া আরও বলেন, ছোঁয়ার মা-বাবা বারবার তার খোঁজ করছিলেন। ছোঁয়াকে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তার মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে রাখা হচ্ছিল। পরে অবশ্য তাঁরা মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় ছোঁয়ার লাশ নিয়ে তিনি (জামাল) বানিয়াচংয়ে পৌঁছান।