মাইদুলের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ২১ শিক্ষকের
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, মাইদুলসহ যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। মাইদুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী ও স্বাধীন শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় শিক্ষকেরা মাইদুলের নিঃশর্ত মুক্তি ও ‘হয়রানির’ প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিলে অংশ নেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘এই যে কিছু সময়ের জন্য আমরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে আছি, তাতেই আমার অনেক অস্বস্তি লাগছে। তার মানে যখন কথা বলতে দেওয়া হবে না, এর চাপটা কতখানি বেশি, তা আমরা বোধ করতে পারছি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল কিন্তু ভয়ংকর কিছু বলেননি। তিনি আসলে যা বলেছেন এবং যার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তা অনেককে বিস্মিত করেছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘প্রচুর আপত্তি সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। এই নিরাপত্তা কার জন্য? কথা বলতে পারাটা আমাদের অধিকার। সেই অধিকার আমরা অর্জন করেছি। এই অধিকার আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং সেটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমাদের এই অধিকার ধরে রাখার কাজ আমরা করে যাব।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। মঙ্গলবার তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষক এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব বলেন, ‘খুবই লজ্জিত অবস্থায় আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। সেই অর্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিছুই করতে পারেনি। মাইদুলের মতো শিক্ষক কারাগারে আছেন, অথচ আমরা বাইরে আছি। তাঁর দোষ কোথায়? তিনি কটূক্তি করেননি, সমালোচনা করেছেন। সমালোচনার ঊর্ধ্বে কে আছে? তাহলে কি আমরা শুধু অনর্গল তোষামোদ করব?’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেপ্তার, জামিন নামঞ্জুর করা, রিমান্ডে নেওয়া এই প্রতিটি পদক্ষেপই আপত্তিজনক, স্বাধীন চিন্তার পরিপন্থী। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট একটি ছাত্র সংগঠন এবং পুলিশ বাহিনীর একপাক্ষিক অবস্থান দেখা গেছে। স্বাধীন শিক্ষকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য দুর্বৃত্তায়নের যে আয়োজন, তার প্রতি আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, স্বাধীনচিন্তা, মুক্তচিন্তা একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ। পর্যালোচনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ একজন শিক্ষকের করার কথা। মাইদুল ইসলাম সেটাই করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে মামলা দিয়ে, কারাগারে পাঠিয়ে আমরা বুঝতে পারছি স্বাধীনচিন্তা, মুক্তচিন্তায় যারা কথা বলছেন, তাঁদের চিন্তার হুমকিমাত্র। আমরা যত কথা বলব, ততই এই হুমকি দূরে হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, মোহাম্মদ আজম, মার্জিয়া রহমান, মুজিবর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।