মাগুরার বিএনপি নেতাদের অভিযোগ-মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

মাগুরা
মাগুরা

‘আমরা নিজেরাই আছি দাবড়ের ওপর। আর আমরাই নাকি আওয়ামী লীগের অফিস ভেঙে বেড়াচ্ছি।’ বিভিন্ন মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন মাগুরা বিএনপির একজন নেতা

নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর মাগুরার দুটি আসনে বিএনপির অন্তত ১৫টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ থাকলেও কোনো মামলা হয়নি। উল্টোদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় ও প্রচারণায় হামলা ও ভাঙচুরের ৫টি মামলায় বিএনপির সাড়ে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির।

১৪ ডিসেম্বর মাগুরা-১ আসনের অন্তর্গত সদর উপজেলার জগদল বাজারে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির প্রায় ১০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে এ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দী মনোয়ার হোসেন খানের ভাই পৌর বিএনপির নেতা কিজিল খান বলেন, ওই দিন বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা করে দুজনকে মারাত্মক জখম করা হয়। পুলিশের ভয়ে তাঁরা মাগুরার কোনো হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে সাহস পাননি। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের দুটি মোটরসাইকেলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দিলেও আমরা এ বিষয়ে মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এতটাই পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে যে আমাদের কেউ থানায় গিয়ে মামলা করার সাহস দেখায়নি। বাদী হওয়ার মতো লোকই আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।’

এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রচারণায় হামলার অভিযোগে শ্রীপুর থানার একটি মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেখানে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেরাই আছি দাবড়ের ওপর। রাতে কোনো পুরুষ বাড়িতে ঘুমাতে পারে না। আমরা আবার নাকি আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করছি।’

অন্যদিকে মাগুরা-২ আসনের বিএনপিদলীয় প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরীর অভিযোগ, গত ১০ দিনে তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিনোদপুর, খালিয়া, বনগ্রাম, বাবুখালী, ঝামা বাজার, সিংড়া, তালখড়িসহ অন্তত ১৫টি এলাকায় বিএনপির নির্বাচনী অফিস ও প্রচারণায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা সেটি আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, ‘উপরন্তু শালিখা উপজেলার সীমাখালি এবং মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর এবং কাউড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের তিনটি অফিস ভাঙচুর নাটক সাজিয়ে আমাদের অন্তত ৬০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না।’

এসব বিষয়ে কোনো মামলা করেছেন কি না? জানতে চাইলে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই যেখানে হামলা হয় সেখানে কার কাছে মামলা করবে মানুষ। বিএনপির ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু আশ্বাস ছাড়া কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ‘বিএনপির কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকেই আমাদের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, এখন পর্যন্ত মাগুরার কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা তাদের চোখে পড়েনি। বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও সেগুলো প্রমাণিত হয়নি।