মাঝের চরে তামাশার ঘর

.
.

১৪ ফুট দীর্ঘ ও নয় ফুট প্রস্থের এক কক্ষবিশিষ্ট পাকা ঘর। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এমন একটি ঘরেই ঠাসাঠাসি করে বসবাস করছে সগির বিশ্বাসের পাঁচ সদস্যের পরিবার।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বর নদের মাঝের চরে সগিরের মতো শতাধিক পরিবার এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র ও মাঝের চরের বাসিন্দারা জানান, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দুস্থদের পুনর্বাসনের জন্য মাঝের চরে ১২৫টি পরিবারকে পাকা ঘর করে দেয় ব্রিটিশ বিজনেস গ্রুপ। পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে সোলার প্যানেল (সৌরবিদ্যুৎ), রেইন ওয়াটার হারভেস্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানাসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ৮ মে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স রিচার্ড আলেকজান্ডার ওয়াল্টার জর্জ ‘সিডর পরবর্তী গ্রাম পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বাড়ি চরবাসীর কাছে হস্তান্তর করেন।
বেতমোর রাজপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিন সদস্যের পরিবারের জন্য এক কক্ষের ঘর এবং তিনের অধিক সদস্যের পরিবারের জন্য দুই কক্ষের পাকা ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মডেল হিসেবে দুই কক্ষের একটি ঘর নির্মাণ করা হলেও বাকি ১২৪টি ঘরই এক কক্ষের নির্মিত হয়। নির্মাণে ত্রুটির কারণে শতাধিক ঘরে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। অনেক ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
চরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন বলেন, ‘ঘর নিয়ে আমাদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।’
ঘর নির্মাণের সময় কর্মরত তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েকজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী সিডর-দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য ব্রিটিশ বিজনেস গ্রুপ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করেন। তাঁদের দেওয়া টাকায় ঢাকার মীর আকতার হোসেন ও প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান ঘরগুলো তৈরি করে।
ঘর নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন মাঝের চরের বাসিন্দা এমাদুল হক। তিনি জানান, পরিবারের সদস্য অনুসারে জরিপ করে এক কক্ষ ও দুই কক্ষের ঘর নির্মাণের কথা ছিল। এক কক্ষের ঘরে সাড়ে তিন লাখ টাকা ও দুই কক্ষের ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় পাঁচ লাখ টাকা।
মীর আকতার হোসেনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজুল করিম বলেন, ব্রিটিশ বিজনেস গ্রুপের দেওয়া নকশা অনুযায়ী ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের টেলিফোনে কয়েকবার ফোন করেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান হাবিব জানান, উপজেলা পরিষদে কোনো বরাদ্দ না থাকায় ঘরগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না।