‘মাদক আছে’ খবর পেয়েই হাজি সেলিমের বাসায় যায় র‌্যাব

লালবাগে হাজি সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনের ২৬ নম্বর বাসাটি ‘চান সর্দার দাদাবাড়ি’ ভবন। এই ভবনে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন ব্যক্তি অবস্থান করছেন। এই খবরের সত্যতা যাচাই ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত সোমবার র‍্যাবের দশ সদস্য ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যান। সেখানে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করেন এই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান মো. সেলিম ও জাহিদুল মোল্লাকে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২ টার পরে চকবাজার থানায় র‍্যাবের ডিএডি মো. কাইয়ুম ইসলাম অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ইরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে চারটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে এসব কথা।

অভিযানের আগের দিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর রোববার ধানমন্ডিতে ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ইরফান, জাহিদসহ আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বাদী হয়ে নৌবাহিনী কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খান ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। থানার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম জানান, গাড়িচালক মিজান গ্রেপ্তার আছেন। মামলা দায়েরের পর রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। দ্রুততম সময়ে তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নিশ্চয়তা দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খবর পাওয়া যায়, র‍্যাব হাজী সেলিমের বাসভবন ঘিরে রেখেছে।

হাজি সেলিমের বাসার সামনে র‌্যাবের অবস্থান।
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে কাইয়ুম ইসলাম বলেন, মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন অবস্থান করছেন, এই খবর পেয়ে ওই বাড়িটির দিকে ছোটেন র‍্যাব-৩ এর সদস্যরা। তিনি এজাহারে বলেন, সোমবার সকালে তিনিসহ দশজন বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় জানতে পারেন চকবাজারের দেবীদাস ঘাট লেনের ২৬ নম্বর বাসা ‘চান সর্দার দাদাবাড়ি’তে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন ব্যক্তি অবস্থান করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ফোর্সসহ তখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে রওনা দেন তিনি। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুজন দৌড়ে ভবনের ওপরের দিকে উঠে যায়। তখন তাঁরা ভবনটিকে ঘেরাও করে ফেলেন। পরে চার সাক্ষীর উপস্থিতিতে র‍্যাব তল্লাশি চালায়। ভবনের চারতলায় দরজার ডানদিকে পশ্চিম দিককার ঘরে মো. জাহিদুল মোল্লাকে পান তাঁরা।

এজাহারে র‍্যাব লিখেছে, জাহিদুল মোল্লার দেহ তল্লাশির সময় কালো রং এর বিদেশি পিস্তল এবং সাদা রং এর জিপারযুক্ত স্বচ্ছ এয়ারটাইট পলিপ্যাক থেকে ২০৩টি করে ৪০৬টি ইয়াবা উদ্ধার হয়। আর দুই পকেট থেকে উদ্ধার হয় দুটি ‘টাচ মোবাইল’। ওই ভবনের চার তলার অন্যপাশে পাওয়া যায় মো. ইরফান সেলিম (৩৭) কে। তাঁর ব্যক্তিগত বিছানার তোশকের ডানপাশের নিচ থেকে পাওয়া যায় পিস্তল।

জাহিদুল মোল্লা ও ইরফান সেলিম দুজনের পিস্তল একই ব্র্যান্ডের। জাহিদুলের জিম্মা থেকে উদ্ধার বিদেশি পিস্তলটি কালো রং এর। ব্যারেলের একদিকে ইংরেজি হরফে লেখা মেড ইন ইউএসএ, অপরদিকে লেখা অটো পিস্তল। পিস্তলের ওপরে লেখা আর্মি। পিস্তলটির ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি। বাঁট সাদা রং এর। বাঁটের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৭ ইঞ্চি। দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন ছিল এতে। প্রতিটি গুলির গায়ে ইংরেজিতে লেখা কে এফ এবং ৭.৬৫। ইরফান সেলিমের কাছ থেকে পাওয়া গুলি ও ম্যাগাজিনের সংখ্যাও এক। এগুলোতেও ইংরেজিতে লেখা কে এফ এবং ৭.৬৫।

সাংসদ হাজি সেলিমের গাড়িতে মোটরসাইকেলের ঘষা লাগায় গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইক আরোহী নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে বেদম পেটানো হয়।
সংগৃহীত

জব্দতালিকায় এয়ারগান, কালো রং এর দুটি ছোরা, চাইনিজ কুড়াল, ৩৮টি কালো রঙের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্যাটারি এবং চার্জারসহ ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফসহ ব্রিফকেস, একটি ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন, বিয়ার ও মদের কথা উল্লেখ আছে। র‍্যাব লিখেছে অবৈধ অস্ত্র, গুলি এবং মাদক বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসা করলে সন্তোষজনক জবাব কিংবা কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে কর্নেল আশিক বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব অভিযান পরিচালনা করেছিল। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এজাহারে র‍্যাব লিখেছে, তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দুজনকে দৌড়ে ওপরের দিকে উঠে যেতে দেখা যায়। ওই দুজন কারা জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, তাঁদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।

অবশ্য ইরফান মো. সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া মামলার কাগজপত্র তাঁরা এখনো হাতে পাননি। তবে তাঁর মক্কেল কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। ইরফানের বাবা হাজী সেলিম অস্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব অস্ত্রের লাইসেন্স আছে।