মাদক মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়

মাদকাসক্তের সুচিকিৎসার পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে মা–বাবার সুসম্পর্কের ওপর জোর।

প্রথম আলো মাদক পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) ডা. জিল্লুর রহমান খান, ডা. মোহিত কামাল ও ডা. ফারজানা রহমান। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

পরিবারে কেউ মাদকে জড়িয়ে পড়লে ধৈর্য ধরে তার চিকিৎসা করাতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির সমস্যা শুধু একজনের নয়। এটা পুরো পরিবার ও সমাজের। মাদক মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুচিকিৎসার পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে মা–বাবার সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নিয়মিত কার্যক্রম পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের স্বজনেরা এসে বিনা মূল্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চিকিৎসকেরা কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, মাদকের চিকিৎসায় লেগে থাকতে হবে। লুকানো চলবে না। পরিবারে কেউ মাদকাসক্ত থাকলে নিজেরাই তার চিকিৎসা করতে পারবেন না। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, সঠিক পরামর্শ মেনে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করতে হবে।

নিজের সন্তান মাদকে আসক্ত হয়েছে কি না, তা জানেন না, কিন্তু কিছু লক্ষণ টের পেয়ে এক অভিভাবক পরামর্শ সভায় যোগ দেন। তিনি জানতে চান, সন্তানকে তিনি কীভাবে বোঝাবেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল জবাবে বলেন, এসব ক্ষেত্রে সন্তানকে হেয় করে নয়, তাকে কৌশলে প্রশ্ন করতে হবে। সন্তানের আত্মবিশ্বাস কোনোভাবেই ভেঙে দেওয়া যাবে না। সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে নিজের চেষ্টায় মাদক থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন একজন। তিনি বলেন, যিনি আসক্ত হন, তিনি বুঝতে পারেন না তিনি অসুস্থ। একসময় তিনি সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কিন্তু পরিবারের সমর্থন ও ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নিলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান বলেন, মাদকাসক্তের পাশাপাশি মুঠোফোনেও এখনকার প্রজন্মের অনেকে আসক্ত হচ্ছে, যা মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সন্তানের সঙ্গে যেন কোনোভাবেই দূরত্ব তৈরি না হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, সন্তানকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মেশাতে হবে। নিজেদের প্রত্যাশার চাপ সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

অভিভাবকেরা এখন খুব ব্যস্ত সময় কাটান। কিন্তু ব্যস্ততার মধ্যে সন্তান যেন দূরে চলে না যায়, সে কথা মনে করিয়ে দেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান খান। তিনি বলেন, সন্তানের কথা শুনতে হবে। ঘরের মধ্যে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাসার গৃহস্থালি কাজে অংশ নিতে সন্তানকে উৎসাহ দিতে হবে।

মাদকবিরোধী আন্দোলনের এই পরামর্শ সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।