মাদারীপুরে লকডাউন কোথাও কড়াকড়ি, কোথাও ঢিলেঢালা

লকডাউনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর অংশে পুলিশের কড়াকড়ি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়কের ভুরঘাটা এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরে বেঁধে দেওয়া ৯ দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন মানুষের চলাচল কিছুটা সীমিত দেখা গেছে। গত দুই দিনের তুলনায় জেলার হাটবাজারগুলোয় মানুষের সমাগম ছিল তুলনামূলক কম। মূল শহর, আশপাশের বাজার, সড়ক–মহাসড়কে বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়ি দেখা গেলেও কোথাও কোথাও আবার ঢিলেঢালা চিত্র দেখা যায়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার, চরমুগরিয়া বন্দর, ইটেরপুল বাজার, পৌরসভা, কলেজ রোড, থানতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষ কারণে বা অকারণে বাসা থেকে বের হচ্ছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই প্রয়োজন ছাড়াও পায়ে হেঁটে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। বাইরে ঘুরে বেড়ানো বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এসব এলাকায় অবাধ চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান, মাহিন্দ্র, অটোরিবশাসহ বিভিন্ন ধরনের থ্রি-হুইলার। এই যানবাহনগুলোয় ওঠা যাত্রীদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা নেই।

তবে হাটবাজারগুলোয় মানুষের চাপ কিছুটা কম দেখা গেলেও লকডাউনে আওতামুক্ত দোকানপাট ছাড়াও কয়েকটি চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, পোশাকের দোকান, রেস্টরেন্ট, খাবারের হোটেল চালু রয়েছে।

মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের কোর্টের মোড়, ডিসি অফিস, টোলপ্লাজা, খাগদী, মস্তফাপুর এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা ও টেকেরহাট এলাকায় পুলিশের সরব উপস্থিতি থাকায় লকডাউনের আওতামুক্ত যানবাহন ছাড়া কোনো যানবাহন অতিক্রম করতে পারছে না। বরিশাল থেকে আসা যাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের কড়াকড়ি ছাড়াও এসব এলাকায় জেলা প্রশাসনের তৎপরতা দেখা যায়।
বরিশাল থেকে অটোরিকশায় করে আসা ঢাকাগামী যাত্রী মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউনের আগে পারিবারিক কাজে লঞ্চে বরিশাল আসছি। এখন লঞ্চ, বাস কিছুই চলে না। কিন্তু কারখানা তো বন্ধ হয় নাই। চাকরি বাঁচাইতে আমরা অটোরিকশাতে উঠছি। এখন পুলিশ ভুরঘাটা আসার পর আর যাইতে দিব না। তাই পায়ে হাইটা সামনের দিকে যাইতাছি।’

ঝালকাঠি থেকে আসা আরেক যাত্রী আসাদ শিকদার বলেন, ‘খুব দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছি। অসুস্থ রোগী দেখতে ঢাকা থিকা বাড়িতে আইছিলাম। লকডাউন এমন কড়াকড়ি হইয়া যাইবে জানলে কাম হালাইয়া আইতাম না। ঢাকায় কামের জায়গার থিকা ফোন দেয়। তাই আইজ না বাইড়াইয়া পাড়লাম না। পায় হাইটা হলেও ঢাকায় যাইতে হবে।’

এদিকে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাশ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জে ধরা পড়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে মাদারীপুরের সাধারণ মানুষ। তাঁরা বর্ডার এলাকায়গুলোতে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। লকডাউন কার্যকর না হলে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট মাদারীপুরেও চলে আসার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ফলে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।

জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাশ্ববর্তী জেলায় করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ধরা পড়ায় আমাদের ঝুঁকি বেড়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশ্ববর্তী মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় এর প্রভাব পড়েছে। তাই অন্য উপজেলার তুলনায় রাজৈরে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি না হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে সকাল থেকে আমাদের পুলিশের একাধিক টিম সড়ক, মহাসড়ক, হাটবাজারে মাইকিং করেছে, টহল দিচ্ছে। দোকানপাট যাঁরা খুলেছেন, সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। যাঁরা বিনা কারণে ঘর থেকে বের হচ্ছেন, তাঁদের ঘরে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশ্ববর্তী জেলা থেকে যে গাড়িগুলো এই জেলায় ঢুকে পড়ছে, সেগুলো আটকে রেখে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা লকডাউনে বাস্তবায়নে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।’