‘মানবাধিকার কমিশন জানেই না তার ক্ষমতা কতটুকু’

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আজ সোমবার এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এক আলোচনা সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেছেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি জানেই না তার ক্ষমতা কতটুকু। এই প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত যে আইনটি আছে, সেটা তারা জানেই না। অপরাধ ও মানবাধিকারের মধ্যে যে ফারাক, তা-ও তারা নিশ্চিত করতে পারে না।

‘মানবাধিকার সংরক্ষণে সরকারের দায়িত্বশীলতা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আজ সোমবার এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় ‘এক দশক শেষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন আসকের সহকারী সমন্বয়ক তামান্না হক। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনার ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধান করতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমিশন অতি সতর্কতা দেখায়। তাদের কার্যক্রমে এমন মনে হয় যে তারা সরকারের বিরাগভাজন হতে পারে, এ জন্য তারা একধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে। কমিশনের অনেকেই তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকেন বেশি। কমিশনে তিন বছর মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা পুনর্নিয়োগ পাওয়ার ব্যাপারে বেশি তৎপর থাকেন বলে অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল হালিম বলেন, মানবাধিকার কমিশন জানে না তার ক্ষমতা কতটুকু। আইনে তার কতটুকু ক্ষমতা, বিষয়টি কমিশন আজ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি।

আইনজীবী আবদুল হালিম ‘বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন: সমস্যা ও প্রত্যাশা’ শিরোনামের একটি গবেষণাগ্রন্থের লেখক। তিনি সেখানে মানবাধিকার কমিশনের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করেছেন। আবদুল হালিম বলেন, মানবাধিকার কমিশন বারবার বলে যে তার ক্ষমতা নেই। কিন্তু যতটুকু ক্ষমতা আছে, তা-ও তারা প্রয়োগ করে না। কমিশন একটি সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের সুপারিশের যথাযথ কোনো বাস্তবায়ন চিত্র কখনোই দেখা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার বলেন, সম্প্রতি পরীমনির ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও এ নিয়ে কমিশন কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। মানবাধিকার কমিশনের কর্মকাণ্ড হতাশাজনক।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন আইন সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, এ অভিযোগ সত্যি নয়। কমিশনের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু কমিশন ম্যান্ডেট মিনিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আরফান আশিক বলেন, ‘একটা সময় বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন শুধু কথা বলে, কাজ করে না। পরে আবার আমরা শুনেছি যে এখন নাকি কথা বলার কাজটিও করা হয় না। গঠনমূলক আলোচনা শুনতে রাজি আছি।’

অনুষ্ঠানে আসকের পরিচালক (কর্মসূচি) নীনা গোস্বামী বলেন, নারায়ণগঞ্জে কারখানায় পুড়ে এত মানুষ নিহত হওয়ার পরও মানবাধিকার কমিশন এ নিয়ে কোনো টুঁ শব্দ করেনি। বাঁশখালীতে গুলিতে শ্রমিক নিহত হলেও তাদের কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে।

আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়ের হিউম্যান রাইটস কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। তাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা বেশি থাকে। প্রত্যাশা পূরণ একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়।