‘মানুষের ছোট ছোট আশা পূরণ করছে কমিউনিটি রেডিও’

শাহানা পারভীন দেশের প্রথম কমিউনিটি রেডিও হিসেবে পরিচিত রেডিও পদ্মার স্টেশন ম্যানেজার। কেমন চলছে রাজশাহীর এই রেডিও, কথা বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব রেডিও দিবসে টেলিফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক কাজী আলিম-উজ-জামান।

রেডিও পদ্মার স্টেশন ম্যানেজার শাহানা পারভীন
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আজ বিশ্ব রেডিও দিবসে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন চলছে রেডিও পদ্মা? আপনারা দিনে কত ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করেন?

উত্তর: নানা সংকটের মধ্যেও আমরা কাজ করছি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। গত ১০ বছরে একটা দিনও আমাদের সম্প্রচার বন্ধ থাকেনি। তবে কর্মীসংকট ও আর্থিক কারণে সম্প্রচারের সময় কখনো কখনো সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। তখনো বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা অনুষ্ঠান করেছি। এর কম করিনি।

প্রশ্ন :

মানুষ এখন রেডিও শোনে কোন মাধ্যমে? আপনারা কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছেন?

উত্তর: মানুষ এখনো রেডিও সেট দিয়েই রেডিও শোনে। আমরা বিভিন্ন সময়ে শ্রোতাদের মধ্যে রেডিও বিতরণ করি। চর এলাকার মানুষের কাছে, রেস্তোরাঁয়, চায়ের দোকানে রেডিও দেওয়া হয়। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যারা সেরা হয়, পুরস্কার হিসেবে তাদের রেডিও দেওয়া হয়। এ কাজে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করেন। তবে শ্রোতারা মুঠোফোনেই রেডিও বেশি শোনেন।
আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছি। আমাদের ফেসবুক পেজ সক্রিয় এবং জনপ্রিয়। রেডিও পদ্মার অ্যাপ রয়েছে। বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে এই অ্যাপ দিয়ে রেডিও পদ্মা শোনা যাবে। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা কমিউনিটি রেডিওর সীমানা অতিক্রম করেছি।

প্রশ্ন :

কমিউনিটি রেডিওর শ্রোতা মূলত কারা?

উত্তর: ছাত্রছাত্রী, গৃহিণী ও দোকানদাররা রেডিও শুনে থাকেন। তবে খেটে খাওয়া মানুষই রেডিওর প্রধান শ্রোতা।

প্রশ্ন :

আপনাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান কোনটি?

উত্তর: অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে শ্রোতাদের বয়স ও রুচির ওপর। ‘গুড মর্নিং রাজশাহী’ আমাদের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান আছে। প্রতিদিন রাত ৮টায় আমরা একটা অনুষ্ঠান করি ‘ফোন ইন লাইভ’। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতার এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিদের আলাপচারিতা ফেসবুকে খুব জনপ্রিয় হয়। ফজলে হোসেন বাদশা, ওমর ফারুক চৌধুরীর মতো জনপ্রতিনিধিদের কথা শ্রোতারা পছন্দ করেন, আলোচনা করেন। এ ছাড়া আমাদের আরেকটা অনুষ্ঠান ‘সাথে থাকুন, শুনতে থাকুন’। প্রতিটি মানুষের কিছু একান্ত কথা থাকে। সেই কথাগুলো আমরা প্রচার করি এই অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠান রাতে হয়।

প্রশ্ন :

আপনারা মোট অনুষ্ঠান সময়ের ১০ শতাংশ সময়ে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারেন। কিন্তু বিজ্ঞাপন কতটা পাওয়া যায়?

উত্তর: আমাদের খরচ অনেক। প্রশিক্ষণের সময় পার হলে স্বেচ্ছাসেবকদের পারিশ্রমিক দিতে হয়, তা যতই কম হোক। আমরা সরকারি–বেসরকারি কিছু প্রকল্পের কাজ করি। এ থেকে কিছু আয় হয়। এর বাইরে কিছু রেস্তোরাঁ ও কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন পাই। কিন্তু তারা এক থেকে দুই মাসের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। আর রেটও খুব কম। বড় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কিন্তু লোকবলের অভাবে বেশির ভাগ সময় তা সম্ভব হয় না।

রেডিও পদ্মার স্টুডিও
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কমিউনিটি রেডিও চালাতে প্রধান সমস্যা কী দেখছেন?

উত্তর: আগের প্রশ্নের উত্তরে আর্থিক বিষয়টি বললাম। এরপরে রয়েছে দক্ষ কর্মীর সংকট। আমরা সাধারণত শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনুষ্ঠান চালাই। কিন্তু একটা সময় পর তাদের পাওয়া যায় না। বিয়ের পর অনেক মেয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারে না।

প্রশ্ন :

কমিউনিটি রেডিওর কোনো সম্ভাবনা কি আপনি দেখেন?

উত্তর: কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে কমিউনিটির কাছে, অর্থাৎ মানুষের কাছে যেতে পেরেছি। সাধারণ মানুষকে গণমাধ্যমের কাছে তুলে আনতে পেরেছি। এটাই বড় সাফল্য। সাধারণ মানুষের ছোট ছোট আশা থাকে। কোনো মেয়ে হয়তো গান করতে চায়। কেউ কবিতা আবৃত্তি, কেউবা অভিনয়। বড় গণমাধ্যম হয়তো তাকে এ সুযোগ দেবে না। মানুষের এই ছোট ছোট আশা পূরণে সচেষ্ট আছি। এটাই সাফল্য মনে করি। আর কমিউনিটি রেডিওগুলো তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে। সরকারের উচিত নিবিড়ভাবে কমিউনিটি রেডিওর পাশে থাকা।

প্রশ্ন :

সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

উত্তর: আপনাকেও ধন্যবাদ।