মামলা আগের, ধরপাকড় তফসিল ঘোষণার পর

রাজশাহীতে বিএনপি নেতারা পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার হচ্ছেন। মামলার ধারাগুলো একই, এজাহারের বর্ণনাও প্রায় অভিন্ন। মামলাগুলো করা হয়েছে তিন থেকে আট মাস আগে। আর আসামিদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়েছে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর। বিএনপির অভিযোগ, নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের মাঠছাড়া করতেই সাজানো মামলায় এখন ধরপাকড় চলছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় তাঁদের নেতা-কর্মীদের পুরোনো সব মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলার ফাঁদে ফেলে সরকার এখন নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চাইছে।

গত মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজশাহী জেলার ছয়টি থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের হওয়া নয়টি মামলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে প্রথম আলো। প্রতিটি মামলারই বাদী পুলিশ। ওই নয়টি মামলার মধ্যে শুধু একটিতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সঙ্গে অন্য একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বাকি আটটিতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সঙ্গে বিস্ফোরক আইনের ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর এসব মামলায় যেসব আসামিকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে দুজন বাদে সবাইকে ধরা হয়েছে গত ৮ নভেম্বরের পর। ওই দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলার তিনটি থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে একই ধারায়। এজাহারের ধরনও এক রকম। বাঘা থানায় মামলার এজাহারে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় তাঁরা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া আসামিরা ককটেল ফেলে যান। এই মামলায় ওই সময়েই গ্রেপ্তার করা হয় বাঘা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবদুস সালামকে। একই মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি এক সমর্থক ও জামায়াতের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চারঘাট থানার মামলাটি হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান নিয়ে। ওই অনুষ্ঠান থেকে পুলিশ চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী (আদালতে স্থগিত) আবু সাঈদ চাঁদকে ধরে নিয়ে যায়। ওই মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর ঘটনার দিন গ্রেপ্তার হওয়া আবু সাঈদকে পরে বাঘা থানার নাশকতার মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পাশাপাশি তাঁকে পুঠিয়া থানার আরও দুটি এবং বাগমারা থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুঠিয়া থানার মামলা দুটির একটি ১৯ ও একটি ৩০ জুন দায়ের করা। বাগমারা থানার মামলাটি করা হয়েছে ৩০ আগস্ট। সব মামলা একই ধারার।

সেপ্টেম্বর মাসেরই ৩ ও ২১ তারিখে তানোর থানায় নাশকতার দুটি মামলা করা হয়। মামলার দুটির ধারা বাঘা ও চারঘাটে করা মামলার অনুরূপ।

এদিকে গত ১ মে মোহনপুর উপজেলায় মে দিবসের শোভাযাত্রা নিয়ে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় ২২ ডিসেম্বর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার আগে ২০ ডিসেম্বর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও পবার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকেও মোহনপুর থানার মে দিবসের ঘটনার ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মকবুল হোসেন ও সোহেল রানা—কেউই ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না।

এ বিষয়ে মোহনপুর থানার ওসি আবুল কাশেম আজাদ বলেন, তদন্তে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ওই দুজনের নাম আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে ২০ ডিসেম্বরই আবু সাঈদের ভাই আজিজুল বারী মুক্তাকে পুঠিয়ার বানেশ্বর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে পুঠিয়া থানায় হওয়া নাশকতার ওই দুই মামলার একটিতে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া গোদাগাড়ী থানার নাশকতার পুরোনো মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুস সালামকে ২৪ ডিসেম্বর রাতে এবং গোদাগাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরীকে ২৫ ডিসেম্বর সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।