মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ১১ স্বেচ্ছাসেবীর সভা, ছিলেন বন্ধুসভার মৌসুমী

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বিশ্বের ১১টি দেশের সম্মুখসারির স্বেচ্ছাসেবকদের বৈঠক।
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন বিশ্বের ১১টি দেশের সম্মুখসারির স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে ৩ আগস্ট ভার্চ্যুয়াল বেঠক করেছেন। এ বৈঠকে ছিলেন বাংলাদেশের তরুণ স্বেচ্ছাসেবক কামরুন্নাহার মৌসুমী। তিনি প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক।

এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা করোনাসহ নানা দুর্যোগে সম্মুখসারিতে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের এসব কাজকে উদ্দীপ্ত করতেই ছিল এ আয়োজন। এখানে বাংলাদেশ ছাড়াও কমোরোস, মালি, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইতালি, নর্থ মেসিডোনিয়া, তিউনিসিয়া, উজবেকিস্তান, ব্রাজিল ও ত্রিনিদাদ টোবাগোর স্বেচ্ছাসেবীরা অংশ নেন। সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার পরেই এ অনুষ্ঠান হলো। অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন উপস্থিত সবার সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এসব স্বেচ্ছাসেবকের কাজের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। কোভিড–১৯ কালে এবং বিভিন্ন সময়ে এসব স্বেচ্ছাসেবী যেভাবে ঝুঁকির মধ্যে তাঁদের কাজ করে গেছেন, তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব স্বেচ্ছাসেবী নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মানুষের জীবনকে নিরাপদ করেছেন। অতিমারির এই ভয়ানক সময়ে মানুষের মঙ্গলের জন্য এসব কর্মীর নিঃস্বার্থ তৎপরতা অনন্য। এসব কর্মীর কাজের মধ্যে ত্যাগের দৃষ্টান্ত সমুজ্জ্বল। সদ্য শেষ হওয়া পবিত্র ঈদুল আজহার মূল চেতনাই আত্মত্যাগ।

স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন।
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী কামরুন্নাহার মৌসুমী, তরুণদের বৃহত্তম সংগঠন প্রথম আলো বন্ধুসভার পরিচিতি তুলে ধরেন। মৌসুমী বলেন, এই করোনাকালে দেশের অসহায় মানুষের জন্য বড় আকারের একটি তহবিল গঠন করেছে বন্ধুসভা। এই সংগঠনের ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৯ হাজার ৩১১টি পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হয়। মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬৫। এসব অর্থ স্বেচ্ছাসেবকেরা নিজেরাই দিয়েছেন।

মৌসুমী আরও বলেন, বন্ধুসভার অগণিত বন্ধুর লক্ষ্য এক, তাঁদের ভাবনা এক। তাঁরা সত্য–সুন্দরের পথে চলতে চান। মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চান। আমাদের আলোকিত বন্ধুরা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন দেশ ও বিদেশে।

এই করোনাকালে কিশোর–কিশোরী ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বড় একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। বন্ধুসভা তরুণদের এই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জোর দিয়েছে।

মৌসুমী বলেন, ‘তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে আমরা নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করি। এখানে দেশের প্রথিতযশা মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন। আমরা এই তরুণদের মানসিকভাবে সহায়তা দিই, সামাজিক সহায়তা দিই। এতে তাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি প্রত্যয় ‘পিএফএ’র সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। এর অর্থ হলো ‘সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড’ বা মনস্তাত্ত্বিক প্রাথমিক প্রতিবিধান। এখানে তিনটি মূল নীতি (থ্রি–এল) নিয়ে কাজ হয়। সেগুলো হলো দেখো, শোনো ও সংযুক্ত করো।

মৌসুমী বন্ধসভার কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা এই তিন মূলনীতিকে মাথায় রেখে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি। করোনাকালে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের সংগঠনের ১৩০টি শাখার স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের সহায়তা করেছি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার মৌসুমী।
ছবি: সংগৃহীত

বন্ধুসভার স্বেচ্ছাসেবীরা এমন অনেক অসহায় অনেক মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন, যাঁরা লোকলজ্জার কারণে প্রকাশ্যে সহায়তাও চাইতে পারেন না। তাঁদের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। শুধু চাল নয়। তেল, ডাল, আলু, সাবান, স্যানিটাইজার—প্রয়োজনীয় এমন অনেক কিছুই এসব ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে।

কামরুন্নাহার মৌসুমী দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক এবং অভিনয়শিল্পীও।
মৌসুমী বলেন, একজন সচেতন ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ, দায়িত্বশীল নাগরিক এবং দেশের বৃহত্তম তরুণ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমরা সব সময় প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশাপাশি থাকি। এই করোনাকালে বন্ধুসভা ভার্চ্যুয়াল কাউন্সেলিং, কর্মশালা এবং সেমিনারের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।

কামরুন্নাহার মৌসুমী বলেন, ‘আমাদের সব প্রচেষ্টা একটি সমন্বিত দলীয় কাজের ফল। দেশজুড়ে স্বেচ্ছাসেবীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং এর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আমাদের আশান্বিত করেছে। এই কাজ আমাদের আগামী দিনের চলার পথের দিশারী হবে।’

মৌসুমীর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা তাঁদের নিজ নিজ কাজের বর্ণনা দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী উজরা জেয়া উপস্থিত ছিলেন।