মিজান ও বাছিরের মামলায় সাক্ষ্য দিলেন ফ্লেক্সিলোডের দোকানি

মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছির
ফাইল ছবি

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির এবং পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ সোমবার আরও একজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর নাম নাছির উদ্দিন। তিনি আদালতকে বলেন, তিনি বনানীর সুপারমার্কেটের একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে চাকরি করেন।

এ নিয়ে মামলার ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।

বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বডিগার্ড হৃদয় হাসান গত বছরের ৯ জানুয়ারি মুঠোফোনের দোকান থেকে একটি সিম কেনেন। হৃদয় হাসান তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছিলেন।

আজ মামলার আসামি মিজানুর ও বাছিরকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার কাগজপত্রের তথ্যানুযায়ী, এই মামলার মোট সাক্ষী ১৭ জন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিআইজি মিজান ও বাছির দুজনই বেআইনিভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওই সিম দুটি ডিআইজি মিজানের দেহরক্ষী মো. হৃদয় হাসান ও আরদালি মো. সাদ্দাম হোসেনের নামে কেনা। সিমের সঙ্গে বাছিরকে একটি স্যামসাং মোবাইল সেটও কিনে দেন মিজান। ওই দুটি নম্বরের মাধ্যমে মিজান ও বাছির নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।

গত ১৮ মার্চ খন্দকার এনামুল বাছির ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। গত ১৯ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

আরও পড়ুন

মামলার বাদী দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আদালতে সেদিন বলেছিলেন, খন্দকার এনামুল বাছির দুদকের কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তৎকালীন ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।
ডিআইজি মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়।

অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান—এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে স্বীকার করে নেন।
তিনি তখন জানান, এনামুল বাছিরকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। বিষয়টি দুদকের নোটিশে এলে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির কাছে লিখিতভাবে খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা গেছে, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মিজানুর রহমান একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রাজধানীর রমনা পার্কে আসেন। সেখানে কথাবার্তা শেষে একসঙ্গে বেরিয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় যান। এরপর খন্দকার এনামুল বাছির ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান। একইভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্কে যান। সেখানে আলাপ–আলোচনা শেষে দুজন শান্তিনগর এলাকায় চলে যান। শান্তিনগরে এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে চলে যান। দুদকের কাছে এ ঘটনার প্রযুক্তিগত প্রমাণের পাশাপাশি চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছেন।


মামলার এজাহারে দুদক আরও বলেছে, এনামুল বাছির ও মিজানের কথোপকথন পর্যালোচনায় তারা দেখেছে, বাছির তাঁর ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন। বিষয়টি তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ডিআইজি মিজান ও বাছির দুজনই বেআইনিভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওই সিম দুটি ডিআইজি মিজানের দেহরক্ষী মো. হৃদয় হাসান ও আরদালি মো. সাদ্দাম হোসেনের নামে কেনা। সিমের সঙ্গে বাছিরকে একটি স্যামসাং মোবাইল সেটও কিনে দেন মিজান। ওই দুটি নম্বরের মাধ্যমে মিজান ও বাছির নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। দুদক বলছে, ডিআইজি মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘুষ লেনদেন–সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেছেন এবং পরে সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন