মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকতাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন

প্রয়াত মিজানুর রহমান খানকে নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় স্মরণসভার।
ছবি: প্রথম আলো

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকতাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। একজন পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিক হতে গেলে যা লাগে, তাঁর সবকিছুই ছিল তাঁর মধ্যে। তাঁর অনুপস্থিতি বিরাট ক্ষতি। এখন তাঁর মতো ভালো সাংবাদিকতা করতে পারলে সত্যিকার অর্থে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হবে।

প্রয়াত প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তাঁর সহকর্মীরা নানাভাবে তাঁকে স্মরণ করেছেন। কবিতা, গান ও বক্তৃতায় মিজানুর রহমান খানের কর্মময় জীবনের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। প্রথম আলোর উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণসভায় প্রয়াত মিজানুর রহমান খানের স্ত্রী ও তিন সন্তান উপস্থিত ছিলেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি মা, স্ত্রী, তিন সন্তান, পাঁচ ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

স্মরণ সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘মিজানুর রহমান খানের অনুপস্থিতি একটি বিরাট শূন্যতা, অপূরণীয় ক্ষতি। একজন পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিক হতে গেলে যা লাগে, তার সবকিছুই ছিল মিজানের মধ্যে। তাঁর কিছু কিছু অংশও যদি নিতে পারি, গ্রহণ করতে পারি, তাহলে সত্যিকার অর্থে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হবে।’

প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, মিজানুর রহমান খান দেশের সাংবাদিকতাকে এবং প্রথম আলোকে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ সময় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পঙ্‌ক্তি থেকে মতিউর রহমান বলেন, ‘তোমার সমস্ত কিছু চলমান/ বহমান/ ধাবমান হবে/ বিদায় বলব না আমি—প্রকৃত বন্ধুর নেই প্রকৃত বিদায়।’

মিজানুর রহমান খানের পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রথম আলো সম্পাদক। তিনি এ সময় উপস্থিত মিজানুর রহমান খানের স্ত্রী আনজিনা শিরিনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং বোন হিসেবে গ্রহণ করার ঘোষণা দেন।

স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, মিজানুর রহমান খানকে নিয়ে স্মরণসভায় কথা বলতে হবে, বুকটা কেমন লাগছে। তিনি একজন ঈর্ষণীয় সাংবাদিক ছিলেন। ২৪ ঘণ্টাই সাংবাদিকতা করে গেছেন।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ৫৩ বছর বয়স চলে যাওয়ার বয়স নয়। কিন্তু ভালো কাজ করলে অল্প বয়সও মূল্যবান হতে পারে, সেটা মিজানুর রহমান খান প্রমাণ করে গেলেন।

বাবার কারণে আইন বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানান মিজানুর রহমান খানের বড় ছেলে শাদমান মিজানুর খান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর পরিকল্পনা ছিল, বার কাউন্সিলের সনদ পাওয়ার পর বাবা-ছেলে সেটার সদ্ব্যবহার করবেন। কিন্তু সেটা হলো না!

অফিসে মিজানুর রহমান খানের কাছাকাছি বসতেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, মিজানুর রহমান খান সব দিক দিয়ে অতুলনীয় ছিলেন।
প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, সাংবাদিকতার মর্যাদাকে বড় করে গেছেন মিজানুর রহমান খান।

স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত মিজানুর রহমান খানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। ‘তুমি রবে নীরবে...’ গানটি গেয়ে মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। কবিতা পাঠ করেন প্রথমা প্রকাশনার জ্যেষ্ঠ পাণ্ডুলিপি সম্পাদক অরুণ বসু।

স্মরণসভায় আরও বক্তৃতা করেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক মশিউল আলম, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল ও রাহীদ এজাজ, প্রথম আলোর প্রশাসন বিভাগের প্রধান উৎপল কুমার চক্রবর্তী, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক সারফুদ্দিন আহমেদ, সহসম্পাদক শাকিলা হক প্রমুখ।