মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানায় উদ্বেগ বিজিবির

বিজিবি–বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা
ছবি: সংগৃহীত

বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ভারতের গুয়াহাটি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের যৌথ প্রেস বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজিবির অনুরোধের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওই সব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২২ ডিসেম্বর এই সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়েছে। শেষ হবে কাল শনিবার। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। ওই সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।

সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো:
(ক)  বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/দুর্বৃত্ত কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পরে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় রাত্রিকালীন যৌথ টহল পরিচালনা বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা, যথার্থ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সর্বদা দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের প্রশংসা করে এবং তারা প্রত্যাশা করে যে বিজিবি এবং বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। সীমান্তে হত্যার ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিএসএফ মহাপরিচালক আশ্বাস প্রদান করেন। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়।

(খ) বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ যেমন: মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদিপশু, জাল মুদ্রা, স্বর্ণ প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে উভয় দেশের যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক এবং এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে চোরাকারবারিদের সম্পর্কিত এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।

(গ) প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়ই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে—এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম/সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে এবং একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

(ঘ) রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১.৩ কিলোমিটার নিরীহ পথের অনুরোধ বিবেচনা করতে বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই পূর্বে অবগত করা ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। উভয় পক্ষই বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।