মিয়ানমার নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে ঢাকার চিঠি

  • সীমান্তের কাছে কয়েকটি জায়গায় প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার।

  • এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরছবি: রয়টার্স

সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখা ও অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তা পরিষদের সহায়তা চাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তে সম্প্রতি সেনা সমাবেশ করে মিয়ানমার। বাংলাদেশকে আগেভাগে না জানিয়ে বেসামরিক নৌকায় করে এনে সীমান্ত এলাকায় হাজারখানেক সেনা মোতায়েন করে তারা। এ নিয়ে একধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এমনই এক পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ১৫ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি দেশ নাইজারকে চিঠি পাঠায়। গতকাল সোমবার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত পরিষদের ১৫ সদস্যকে জানাতে অনুরোধ জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ১১ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে মাছ ধরার ট্রলারে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করে বাংলাদেশ। বিনা উসকানিতে এভাবে সীমান্তের কাছে নতুন করে সেনা সমাবেশের প্রতিবাদে ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্দেহজনক এসব তৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি অবসানের জন্য মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলে বাংলাদেশ। এর দুই দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

ওদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে। এ সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে নতুন সেনা সমাবেশ হয়নি। মিয়ানমারের যেসব সেনা বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্তে কাজ করছিলেন, তাঁদের বদলে নতুন সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক ও ঢাকায় দুটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিক সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে জানায়, ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে মিয়ানমার মিশনও নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে মিয়ানমার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে, সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েন হয়নি।

অবশ্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের তৎপরতাকে সন্দেহজনকই বলছে। নিরাপত্তা পরিষদে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশ জানিয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে উত্তর মংডুর কয়েকটি জায়গায় প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। এর এক দিন আগে (১০ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমার নৌবাহিনীর সরঞ্জাম পরিবহনের জাহাজ ইনদিন গ্রামে সেনাদের নামিয়ে দেয়। পরে তাদের স্থানীয় ব্যক্তিদের মাছ ধরার ২০টি ট্রলারে করে নাফ নদীর কাছে গার খু ইয়া গ্রামে নেওয়া হয়। এলাকাটি মংডু শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৩ কিংবা ১৪ সেপ্টেম্বর মাঝরাতে মংডুর একটি গ্রামে অভিযান চালায় মিয়ানমার সেনারা। ওই অভিযানে পাঁচজন রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিনজন রোহিঙ্গা নারীকে আটক করা হয়। কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের অন্য পাশ থেকে অব্যাহতভাবে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মংডুর কাছাকাছি গ্রামে চলছে অভিযান।

বাংলাদেশ মনে করে, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাদের সাম্প্রতিক তৎপরতার সঙ্গে ২০১৭ সালের আগস্টের অভিযানে বলপূর্বক রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হারে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে। যেসব এলাকায় মিয়ানমারের সেনারা অভিযান চালাচ্ছে, তা থেকে এটি অনুমেয় যে অভিযানের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষের সম্পৃক্ততা নেই।

নিরাপত্তা পরিষদকে বাংলাদেশ আরও লিখেছে, ঢাকাকে আগেভাগে না জানিয়ে দুই দেশের সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা মোতায়েন, বিশেষ করে বেসামরিক ট্রলারে করে সেনাদের পারাপারে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে মিয়ানমারের গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষের ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলো সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

চিঠিতে গত জুন থেকে মিয়ানমার সীমান্তে আরও কিছু আপত্তিকর কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বেসামরিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানে মিয়ানমারের যে প্রতিশ্রুতি, তার প্রতি দেশটিকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। এ বিষয়গুলো যে ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে, তা–ও নিরাপত্তা পরিষদকে জানানো হয় চিঠিতে।