মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, আদেশ ২৬ মে

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য ২৬ মে দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ আল-মালুম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দেন। নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীর জবানবন্দি, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র, নথিপত্রের সিডি ও ডিভিডি। তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটি নথিভুক্তের আবেদন করা হয়। পরে অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশের জন্য ২৬ মে দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের নভেম্বর মাসে শহীদ জসিমসহ মোট ছয়জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলের নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। নভেম্বর মাসেই রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে ওই নির্যাতনকেন্দ্রে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মীর কাসেমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আরও জানায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মীর কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) সভাপতি হন। একাত্তরের ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তাঁর নেতৃত্বে ও পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় আলবদরের সদস্য ও রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধকালে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল, আছদগঞ্জের মোহাম্মদ পাঞ্জাবির ভবন (চামড়ার গুদাম), পাঁচলাইশের সালমা মঞ্জিল প্রভৃতি স্থানে নির্যাতনকেন্দ্র গড়ে তোলে। এসব নির্যাতনকেন্দ্রে বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ১৯৮০ সালে তিনি রাবিতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এদেশীয় পরিচালক হন। তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি জামায়াতের শুরা সদস্য। গত বছরের ১৭ জুন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-১ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন।