মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার এক রায়ে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়া ও লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম বিসর্জন প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস। এই ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র আবেগ ও গৌরবের মধ্যে মিশে আছে।
নেত্রকোনার রাজাকার ওবায়দুল হক (তাহের) ও আতাউর রহমানের (ননী) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে গতকাল ট্রাইব্যুনাল এ কথা বলেন। রায়ে ওবায়দুল ও আতাউরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এরই মধ্যে গতকাল ট্রাইব্যুনাল তাঁর রায়ে শহীদের সংখ্যাকে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস বলে উল্লেখ করলেন।
২৬৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের ৪৪৬তম অনুচ্ছেদে ট্রাইব্যুনাল বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বাঙালি জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস যুদ্ধ করেছেন, এ ইতিহাস তর্কের ঊর্ধ্বে। যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, লাখ লাখ নারী তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন। এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতির পবিত্র আবেগ ও গৌরবের মধ্যে মিশে আছে, যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, রায়ে সেই যুক্তি খণ্ডন করে আদালত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কের অবকাশ নাই। এই ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ।
গত ২১ ডিসেম্বর একটি সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।’ ওই বক্তব্যের পর সরকারের অনুমতি নিয়ে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছেন এক আইনজীবী।